আওয়ামী লীগ নেতাকে জুতার মালা পরিয়ে ভিডিও ধারণ

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

বরিশালে মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধর করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোনার বাংলা মটরসের স্বত্বাধিকারী।

জানা গেছে, ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়ে ফেলায় ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দারের নেতৃত্বে তাকে এমনভাবে হয়রানি করা হয়।

এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতার গলায় জুতার মালা পরানোর দুটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভিডিও এক মিনিট দুই সেকেন্ডের, অপরটি ১৭ সেকেন্ডের।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়ে রাখায় শাস্তিস্বরূপ গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে। একটি ভিডিওতে ওই ব্যবসায়ীকে বাধ্য করা হয়েছে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি দোকান থেকে নামিয়ে রাখা অন্যায় হয়েছে বলতে। অপরটিতে শোনা যায়, ছবি নামানোর শাস্তিস্বরূপ শিক্ষা দেওয়ার কথা।

হয়রানির শিকার আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু বলেন, ‘বরিশালের ১১ নম্বর ওয়ার্ড বান্দ রোডে সোনারবাংলা মটরস নামে আমার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। মূলত আমার পূর্ব পরিচিত নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দারের নেতৃত্বে আমাকে নির্যাতন করা হয়। গত ২২ আগস্ট মোবাইলে আমাকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তৌহিদুর রহমান ছাবিদের ক্লাব হিসেবে পরিচিত নগরীর কালুশাহ সড়কের শহীদ রহিম স্মৃতি পাঠাগারে ডেকে নেন। বিকেল ৩টার দিকে সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুম আটকে ওখানে আগে থেকে অবস্থান করা সাব্বির, আব্দুল, কাওছার, সোহাগ আমাকে মারধর শুরু করেন। তারা সবাই সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী। আমাকে রুমের মধ্যে আটকে ৮-৯ দফায় মারধর করেন। মারধর করে তারা আমাকে বলতে বলে ‘‘আমার ব্যক্তিগত অফিস থেকে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়েছি’’। ওরা যতবার এই কথা বলতে বলেছে, ততবার আমি বলেছি যে ‘‘সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি আমার অফিস থেকে আমি নামাইনি’’। শেষে মারধরের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে ওদের শেখানো কথা বলি যে “সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়েছি এবং তা অন্যায় হয়েছে”।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। আমাকে হয়রানি করার জন্য কাওছার জুতার মালা বানিয়ে দেয় আর সোহাগ আমার গলায় পরিয়ে দেয়। আমি দুই-তিনবার ফেলে দিই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে আরও মারধর করে। শেষে আমি জ্ঞান হারালে গলায় জুতার মালা পরিয়ে চেয়ারে বসিয়ে ভিডিও করে।’

মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু বলেন, ‘এর আগে মঈন জমাদ্দার কয়েক দফায় হুমকি দিয়েছে, আমি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর পক্ষে কাজ করলে বরিশালে থাকতে দেবে না। সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশালে ফিরলে আমাকে মারধর করবে। আমার কক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছবি আছে। যেহেতু আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি এবং আমার অফিস সোনার বাংলা মটরসে বিভিন্ন নেতারা আসেন। এই ইস্যু কাজে লাগিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে যে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি আমার অফিস থেকে নামিয়ে রেখেছি। এই অভিযোগ তুলে আমাকে মারধর ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দার বলেন, ‘মনিরুজ্জামান খান বাচ্চুর যে ভিডিও ছড়িয়েছে তা আমি ধারণ করেছি ও ছড়িয়েছি এটা সত্য। কিন্তু জুতার মালা পরানোর যে ভিডিও তার আগের ভিডিওর সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তাছাড়া ওখানে সাদিক আব্দুল্লাহর নাম বলাটাও আমার উচিত হয়নি। এটা আমি ভুল করেছি। এজন্য সাদিক ভাইও (সাদিক আব্দুল্লাহ) আমার ওপর খুব ক্ষিপ্ত হয়েছেন।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।

এদিকে, মারধর ও জুতার মালা পরানোর অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেছেন মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু। মামলায় নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দার ও মো. সোহাগের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিভাগের অন্যান্য