নতুন দামে বিক্রি হচ্ছে পুরনো বোতলের তেল

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

নতুন করে গত ৪ মে ফের ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। নতুন দামের বোতলজাত সয়াবিন তেল এখনো বাজারে আসেনি। তবে পুরনো দামের বোতলজাত সয়াবিন তেল নতুন দামে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকে।

ভোজ্য তেল আমদানিতে সরকারের দেওয়া ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয় গত ৩০ এপ্রিল। এরপর বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ৪ মে নতুন করে লিটারে ভোজ্য তেলের দাম ১২ টাকা বাড়িয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৯ টাকায় বিক্রি হবে। এত দিন এই দাম ছিল ১৮৭ টাকা। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ৯৬০ টাকায়। এত দিন বিক্রি হতো ৯০৬ টাকায়। আর খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা। ফলে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম হচ্ছে ১৭৬ টাকা। এত দিন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৭ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের নতুন দাম ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গতকাল রবিবার রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্য তেল সরবরাহকারী কম্পানিগুলো এখনো বাজারে নতুন দামের বোতলজাত তেল সরবরাহ করেনি। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর থেকেই আগের বোতলজাত তেল নতুন দামে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। নতুন দামের বোতলজাত ভোজ্য তেল এখনো বাজারে সরবরাহ না করা হলেও কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রামপুরা বাজারে কথা হয় আফরোজা খাতুন নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে। তাঁর হাতে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বোতলের গায়ে মূল্য লেখা ১৮৭ টাকা, কিন্তু আমার কাছ থেকে নিয়েছে ১৯৫ টাকা। দোকানদার বলেছেন, যেহেতু আমি নিয়মিত কাস্টমার, তাই চার টাকা কম রেখেছেন। অন্যদের কাছ থেকে রাখছেন ১৯৯ টাকা। দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর এখনো নতুন দামের তেল বাজারে আসেনি। দোকানিরা আগের তেল নতুন দাম ১৯৯ টাকা বিক্রি করছেন।’

আগের বোতলজাত তেল নতুন দামে বিক্রি করার বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দাম বাড়ানোর ঘোষণার এক দিন আগে থেকে ভোজ্য তেল সরবরাহকারী কম্পানির ডিলাররা আগের দামে আর তাঁদের কমিশন দিচ্ছিলেন না। ডিলাররা কমিশন ছাড়াই বোতলের গায়ের দামেই খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। রসিদও দিচ্ছেন না ডিলাররা। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে বোতলের গায়ের আগের দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল বিক্রি করছেন নতুন দামেই।

রাজধানীর বাড্ডার জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী তোফায়েল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তেলের দাম বাড়বে জেনে অনেক কম্পানি তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল। যেটা দিচ্ছিল সেটা গায়ের দামে। ফলে অনেককে আগে তেলের বোতলের গায়ে যে দাম লেখা রয়েছে তার চেয়ে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখনো আমরা নতুন দামের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাইনি। ডিলারদের কাছে টাকা দিয়ে রেখেছি। আশা করা যাচ্ছে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে নতুন দামের তেল পাওয়া যাবে। তবে বাজারে তেলের কোনো সংকট নেই।’

চিনির বাজার

চিনির বাজারে অস্থিরতা কমছে না। বাজারে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া না গেলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ৩৬ টাকা বেশি দিয়ে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে খোলা চিনি। চিনি ব্যবহার করা হয় এমন খাবারের দামও বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোয় খুচরায় ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে।

গত সাত মাসে সরকার পাঁচবার চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু কোনো বারই নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি চিনি। সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল সরকার খোলা চিনির কেজি খুচরায় সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

চিনির বাজারের অস্থিরতার মধ্যেই গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনে চিনির দাম কেজিতে ২৬ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠান আমদানিকারকরা।

আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেডের হেড অব সেলস মনিরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়ে ৬৮০ থেকে ৭০০ ডলার হয়েছে। ফলে খোলা চিনি কেজিপ্রতি ১২৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি কেজিপ্রতি ১৩৫ টাকা নির্ধারণের জন্য ট্যারিফ কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য