ক্যালিফোর্নিয়ায় শহীদ মিনার উদ্বোধন করলেন ড. মোমেন
সিলেটের সময় ডেস্কঃ
লসএঞ্জেলেস থেকে ৭০ মাইল দূরে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের পেরিস সিটির প্রবাসী বাংলাদেশিরা পেল স্থায়ী শহীদ মিনার। শহরের একটি পাবলিক লাইব্রেরির সামনের পার্কে ১ লাখ ৮৭ হাজার ডলার ব্যয়ে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেছে পেরিস সিটি কাউন্সিল। ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পেরিস সিটি মেয়র মাইকেল এম ভার্গাস এর সাথে সম্পৃক্ত অন্যসকলকে পাশে নিয়ে ফিতা কেটে এর উদ্বোধন করেন।
ভাষা সৈনিক ডা. মোহাম্মদ সিরাজউল্লাহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মীনি এবং সমাজকর্মী সেলিনা মোমেন, লসএঞ্জেলেসস্থ কনসাল জেনারেল সামিয়া আঞ্জুম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব লসএঞ্জেলেসের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এম হোসেন বাবু, ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ইনক এর সভাপতি শহীদ আহমেদ মিঠু, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ খলিলুর রহমান রাজু, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল শাহীন, সহ-সভাপতি টিটো ইসলাম, অ্যাম্বাসেডর শওকত আলম, কনভেনর সাঈদ হিমু, জনসংযোগ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল, উপদেষ্টা সাইফুর ওসমানী জিতু, ইসমাইল হোসেন এবং মোহাম্মদ আলী এ সময় সেখানে ছিলেন।
আমেরিকা এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের পর শহীদ মিনারটির উদ্বোধনের পরই ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে এক মিনিট দাঁড়িয়ে সকলে নিরবতা পালন করেন। শুরু হয় শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের কর্মসূচি। মন্ত্রী, কন্সাল জেনারেল, সিটি মেয়রের পর বাংলাদেশি কমিউনিটি ইংল্যান্ড এ্যামপায়ার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব লস এঞ্জেলেস, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, ক্যালিফর্নিয়া স্টেট আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের ক্যালিফোনিয়া শাখা, ক্যালিফোর্নিয়া আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। মধ্যাহ্ন-ভোজ বিরতির পর ১৯৫২ সালের ভাষা সৈনিক ডা. মোহাম্মদ সিরাজউল্লাহ-সহ লসএন্জেলেস প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পীদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন পেরিস সিটি মেয়র মাইকেল এম ভার্গাস।
আমেরিকায় জন্ম এবং বেড়ে উঠা প্রজন্ম নিয়ে ৪টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৫টা ১৫মিনিটে কাবেরী রহমানকে দিয়ে শুরু বড়দের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় সংগীত পরিবেশন করেন কেয়া ইকবাল, মাহফুজা শিল্পী, শহিদ আলম। শেষে আমন্ত্রিত শিল্পী এস আই টুটুল উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে রাখার মত কয়েকটি গান পরিবেশন করেন।
উল্লেখ্য, এই সিটির মোট জনসংখ্যা ৮০ হাজারের মত। নতুন বসতি হলেও বাঙালীরা নবউদ্যমে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথে ধাবিত হচ্ছেন। সাথে জড়িয়ে রাখছেন বাঙালীর চিরায়ত সংস্কৃতি এবং সংগ্রামী চেতনা। সে আলোকেই পেরিস সিটিতে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় কাঠের ফ্রেমে শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের কর্মসূচি চালু হয় ২০১২ সালে। ‘ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে ইনক’ নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে মহান শহীদ দিবস উদযাপনের কর্মসূচি সূত্রেই ২০২০ সালে সিটি মেয়র মাইকেল এম ভার্গাস সমীপে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয় স্থায়ীভাবে শহীদ মিনারের জন্য। এরপরই সিটি মেয়র ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে ইনক’ কে আমন্ত্রণ জানান। এই সংগঠনের ১০ জন সেখানে যাবার সময় শহীদ মিনারের একটি নমুনাও (কাঠের তৈরি শহীদ মিনার) সাথে নিয়ে যান। তা দেখে মেয়র সম্মত হন এবং জানান, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সবকিছু করা হবে। মেয়রের আন্তরিকতার কারণে খুব দ্রুত সিদ্ধান্তটি হয়।
মেক্সিকান আমেরিকান এই মেয়র বলেন, মাতৃভাষার জন্য সংগ্রামের পথ বেয়ে বাঙালিরা স্বাধীন একটি ভূখণ্ড লাভ করেছেন- এটি ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বাঙালির এই ত্যাগের কথা সকল ভাষা-ভাষী মানুষকে জানানোর প্রয়োজন রয়েছে ভীষণভাবে। এই শহীদ মিনার হয়ে উঠবে সেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া, এটি পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে নির্মিত হওয়ায় ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের কৌতুহলের অবসানও ঘটাতে সক্ষম হবে।