চুরির অপবাদে ৪ শিশুর মাথা মুড়িয়ে দিল আ.লীগ নেতার ছেলেরা

সিলেটের সময় ডেস্কঃ

রিকশার একটি চেইন চুরির অপবাদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া চার শিশুকে মারধরসহ মাথার চুল ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে তার ছেলেরা এ কাজ করেছে বলে জানা গেছে। ওই চার শিশু ঘটনার পর থেকে ‘চুরির অপবাদের কারণে’ বিদ্যালয়েও যেতে পারছে না। উপরন্তু প্রভাবশালি আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের হুমকির মুখে পড়েছে দরিদ্র শিশুদের পরিবার। শিশুদের এমন নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

গত শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ক্লাস পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নির্যাতনের ঘটনার পর সোমবার গভীর রাতে নির্যাতিত শিশুদের দুই অভিভাবক উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করতে যান।

এ বিষয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে জানান, গত রবিবার রাতে নির্যাতিত এক শিশুর বাবা থানায় প্রথম এসেছিলেন। আমি সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তাদের দ্রুত এজাহার নিয়ে আসার জন্য বলেছিলাম। তারা এসেছেন সোমবার গভীর রাতে।

ওসি আরো বলেন, ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। চুরির ঘটনা ঘটে থাকলে থানায় না এসে শিশুদের নির্যাতনের ঘটনাটি দুঃখজনক। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ। এ কারণে মামলা রেকর্ড করেই তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

এলাকাবাসী জানান, তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যরা প্রতিবেশী দরিদ্র পরিবারের চার শিশুকে নির্যাতনসহ একে একে সবার মাথা ন্যাড়া করে দেয়। নির্যাতনের শিকার শিশুরা হচ্ছে- একই এলাকার বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন ও রেজাউল করিম এবং রুমখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর সহোদর ছাত্র সাকিব ও রাকিব।

ঘটনার বিষয়ে থানায় প্রদত্ত এজাহারের বাদী রফিকুল ইসলাম ড্রাইভার কালের কণ্ঠকে জানান, স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামের নির্দেশে তার ভাই কামাল উদ্দিন মনু, তিন ছেলে রিদুয়ান, জসিম ও ফোরকান আমার ছেলে সাজ্জাদসহ চার শিশুকে মারধর ও চুল মুণ্ডিয়ে দেয়। আমার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মোহসেনা ছেলে সাজ্জাদকে আনতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

তিনি আরো জানান, ঘটনার পর পরই নির্যাতনের শিকার শিশু সাজ্জাদ এবং স্ত্রী মোহসেনাকে নিয়ে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করান। এ কারণে থানায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার দুই সহোদর সাকিব ও রাকিবের পিতা সৈয়দ আলম কালের কণ্ঠকে জানান, আমি পালং মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন নৈশপ্রহরী। শুক্রবার সকালে চুরির অপবাদ দিয়ে আমার দুই শিশুসহ চারজনকেই আমাদের প্রতিবেশী আওয়ামী লীগের নেতা রফিকুল ইসলামের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে তাদের মারধর করা হয়।

তিনি বলেন, এক পর্যায়ে নেতার নির্দেশে তার পুত্র ফোরকান ব্লেড আনে। তারপর নেতার ভাই মনু ও পুত্র রিদুয়ান প্রত্যেক শিশুর মাথার চুল ফেলে দেয়।

নৈশপ্রহরী সৈয়দ আলম দুঃখের সাথে বলেন, তার দুই সন্তান এখন আর বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কেননা ছেলেদের সহপাঠীরা তাদের টিপ্পনি কেটে ‘চোর’ বলে ডাকাডাকি করে। তাই তারা লজ্জা-অপবাদে বিদ্যালয়েও যেতে পারছে না।

তবে এসব কিছু অস্বীকার করেছেন উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, চুরি করা রিকশার চেইন এক শিশুর হাতে পাওয়া গেছে। তাই আমার ছেলেরা শিশুদের প্রথমে বকাবকি করে। কিন্তু উল্টো শিশুদের অভিভাবকরা বড় গলায় কথা বলায় আমার ছেলেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওই শিশুদের মাথার চুল কেটে দিয়েছে।

তিনি জানান, ঘটনাস্থলে ওই সময় তিনি ছিলেন না। যখন ঘটনাস্থলে আসেন তখন সব শেষ হয়ে গেছে। তবে এ সব ঘটনার জন্য তিনি তার ছেলেদের বকাবকি করেন বলেও জানান।

এ বিভাগের অন্যান্য