সিলেটে বন্যায় সড়কে ভাঙন, চরম দুর্ভোগ

নিউজ ডেস্ক: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩শ’ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে বেশির ভাগ সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও রয়ে গেছে স্রোতের তোড়ে সৃষ্ট ভাঙন। এ অবস্থায় বড় ধরণের দুর্ভোগে পড়েছে ওই সব রাস্তা দিয়ে চলাচলের যানবাহন এবং মানুষজন।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেটে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ২৬১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার আর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ৪০ কিলোমিটারের মতো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক তলিয়ে যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় আর সবচেয়ে কম বিয়ানীবাজার উপজেলায়।

এর মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৬৭ কিলোমিটার ও বিয়ানীবাজারে ২ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই সড়কগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জেলার সবকটি সড়কেই খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বন্যায় এসব রাস্তাঘাট ভাঙনের ফলে যেমন যানবাহনের সমস্যা হচ্ছে ঠিক তেমনি যাত্রীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাররফ হোসাইন বলেন, আমাদের এলাকার রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। পানিতে রাস্তাঘাটে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এতে আমাদের চলাফেরায় অনেক কষ্ট হয়। এসব রাস্তা দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ পর্যটকরা যাতায়াত করেন। তাই দ্রুত এই রাস্তাঘাটগুলো সংস্কার করার দাবি জানাই।

সিএনজি অটোরিকশা চালক আলাউদ্দিন ব্যাপারী বলেন, বন্যার পর থেকে রাস্তাঘাটে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়। এছাড়া বেশির ভাগ রাস্তার জায়গায় জায়গায় গর্ত। আর গর্তগুলো বড় বড় হওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তথ্য মতে, এবারের বন্যায় সিলেট সদর উপজেলায় ২৭ কিলোমিটার, বিশ্বনাথ উপজেলায় ৬ কিলোমিটার, ওসমানীনগর উপজেলায় ১৪ কিলোমিটার, বালাগঞ্জ উপজেলায় ২৩ কিলোমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ১০ কিলোমিটার, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১০ কিলোমিটার, বিয়ানীবাজার উপজেলায় ২ কিলোমিটার, জকিগঞ্জ উপজেলায় ১০ কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৫৪ কিলোমিটার, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৬৭ কিলোমিটার, কানাইঘাট উপজেলায় ২০ কিলোমিটার, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৫ কিলোমিটার এবং জৈন্তাপুর উপজেলায় ১০ কিলোমিটারসহ সর্বমোট ২৬১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে যায়।

এর মধ্যে কত কিলোমিটার সড়ক বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। কারণ এখন বন্যার পানি পুরোপুরি নামে নি। এজন্য বন্যার পানি নামলে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এরপর বলা যাবে বন্যায় সিলেটে কত কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এসব সড়ক সংস্কারে কত টাকার প্রয়োজন।

অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেট অফিস জানিয়েছে, বন্যায় কত কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে বন্যার পানি নামার পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা তৈরি করা হবে। পরে এই তালিকা অনুসারে বরাদ্ধের জন্য টাকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সিলেটে নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম মহসীন বলেন, বন্যার পানি নামার পরপরই আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করতে পারবো। যেহেতু এখন বন্যার পানি নামেনি সেজন্য আমরা কোন উপজেলায় কত কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বলতে পারছি না। তবে বন্যার পানিতে আমাদের ২৬১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বন্যায় যে সকল সড়ক তলিয়ে গেছে সেগুলো বেশির ভাগ হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই আমাদের কিছু সড়ক ভাঙ্গে। সেই জন্য পুরো ক্ষতির হিসেবটা করতে আমাদের আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

আর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, বন্যায় আমাদের খুব বেশী সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। শুধুমাত্র গোয়াইনঘাটের কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আমাদের ধারণা। এর মধ্যে বেইলি ব্রিজের সড়কটা একটু বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপরও কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য