মুখোশের আড়ালে পৈশাচিকতা!
নিউজ ডেস্ক: আশরাফুল ইসলাম আরিফ। মাস্টার্স শেষে বেছে নেন শিক্ষকতা। সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৪ সালে যোগ দেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার কান্দাপাড়ায় অক্সফোর্ড হাইস্কুলে। সেই থেকে ভালোই চলছিল জীবন। ইংরেজি ও গণিতে বেশ পারদর্শী শিক্ষক আরিফের পাঠদান পদ্ধতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী তার কাছে প্রাইভেট পড়তেও শুরু করে; কিন্তু কে জানতো, মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে পৈশাচিকতা!
প্রথমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের সঙ্গে দুই-একটি ঘটনা ঘটায় শিক্ষকরূপী এ নরপিশাচ; কিন্তু কেউ মুখ না খোলায় এক সময় বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে। একের পর এক ছাত্রীকে টার্গেট করতে থাকে। এমনকি ব্ল্যাকমেইল করে এক ছাত্রীর মাকেও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। মূলত প্রলোভন দেখিয়ে, কাউকে পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেওয়ার কথা বলে, কোনো ছাত্রীকে ফেল করিয়ে দিয়ে, আবার কোনো ফেল করা শিক্ষার্থীকে ডেকে ভালো নম্বর পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলত শিক্ষক আরিফ; তবে শেষরক্ষা হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার তাকে ধর্র্ষণের দায়ে আটক করে র্যাব। এ কাজে সহযোগিতা করার অপরাধে আটক করা হয় স্কুলটির প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকারকেও। পরদিন তাদের বিরুদ্ধে পৃৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় রুজু হলেও এর মূল তদন্ত করছে র্যব-১১। তদন্তে ইতোমধ্যে আরিফের বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে ২০ থেকে ২৫ ছাত্রীকে ধর্ষণের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
র্যাব ১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষক আরিফের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এমন প্রায় ৭ থেকে ৮ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের ডিভাইস চেক করে ২০ থেকে ২৫ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির প্রমাণ মিলেছে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণির বিভিন্ন শিক্ষার্থীই তার পাতা ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এমনকি এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় এবং তার মাকেও সে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।’
আলেপ উদ্দিন জানান, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে আরিফ। স্কুল থেকে পাঁচশ গজ দূরে একটি ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে শুধু ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াত সে। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিজের স্কুলের এবং বাইরের বেশ কয়েক ছাত্রীকে বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে ফেলে একাধিকবার ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। একজনকে ফেল করিয়ে দিয়ে এবং আরেকজনকে বাসায় ডেকে অন্যের খাতা দেখে লেখার সুযোগ দিয়েও ধর্ষণের কথা জানিয়েছে এ শিক্ষক।
এ ছাড়া ২০১৫ সালে এক ছাত্রীকে টার্গেট করে পরের বছর ধর্ষণ করে; কিন্তু ভয়ে অভিভাবকদের কাছে এ শিক্ষকের অনৈতিক আচরণের কথা বলেনি শিক্ষার্থীরা।