সিলেটে শর্ত লংঘন করে মেলায় চলছে অবৈধ বাণিজ্য

অদৃশ্য কারণে এ্যাকশনে যাচ্ছে না প্রশাসন!

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়েই মেট্রোপলিটন চেম্বার আয়োজিত সিলেট ৫ম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রতিদিন চলছে র‌্যাফেল ড্র নামে জুয়ার আসর। মেলা মাঠে প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিষয়টি পুরোদমে প্রশাসন অবগত থাকলেও দোহাই দিচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। ৮ শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পত্রে কোথাও র‌্যাফেল ড্র করার কথা উল্লেখ নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব একেএম আলী আহাদ খান স্বাক্ষরিত মেলার অনুমোদন পত্রের ‘খ’ শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে মেলায় অবৈধ /অশালীন/ অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারেনা।
মেট্রোপলিটন চেম্বার আয়োজিত সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু থেকেই প্রতিদিন শর্ত অমান্য করে চলছে এই অবৈধ বাণিজ্য। এতে করে প্রতিদিন নি:স্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রশাসন এদিকে খেয়াল না করে নিজেদের পেকট ভারি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে মেলা কর্তৃপক্ষ প্রবেশ মূল্যের উপর র‌্যফেল ড্র এর কথা বললেও মেলায় প্রবেশের পরেও মাঠের ভিতরে একাধিক বুথে বিক্রি হচ্ছে লটারীর টিকিট।

প্রশাসন বলছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ক্রমে মেলা চলছে। তবে, শর্ত লংঘন করে মেলা চললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিদিন শর্ত লংঘন করে মেট্রোপলিটন চেম্বারের আয়োজনে এই অবৈধ লটারির আয়োজন চললেও প্রশাসন কেবল বিবৃতি দিয়েই দায় সারছে। কোন এক অদৃশ্য কারণে কোনো ধরনের এ্যাকশনে যাচ্ছেনা স্থানীয় প্রশাসন! সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রেরিত প্রতিদিনের লটারি ড্র এর ফলাফল বিভিন্ন মেইলে আসলেও নজরে পরেনি প্রশাসনের। তাছাড়া স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকা ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের।

শাহী ঈদগাহয়ের কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভের সাথে বলছেন, প্রশাসন কেনো এদের বিরুদ্ধে কোনো প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না? কোন অদৃশ্য কারণে প্রশাসন এমন অবৈধ কার্যকলাপের সহযোগীতা করছে? গুটি কয়েকজন প্রশাসনের কর্মকর্তার কারনে  প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষ তাদের আস্থা হারাচ্ছে।

এদিকে, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে এবারের ৫ম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাইকিং হচ্ছে নগরীর সর্বত্র। মেলার প্রবেশ মূল্যের উপর র‌্যাফেল ড্র জানিয়ে মহানগরের প্রতিটি এলাকায় করা হচ্ছে মাইকিং। পুরস্কারের লোভে প্রতিদিন টিকিট কিনছে বিপুলসংখ্যক মানুষ।

মেলায় প্রতিদিনের লটারি ড্র সিলেট ক্যাবল সিস্টেমের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। প্রশাসনও এ বিষয়টি অবগত হয়েও নীরব ভূমিকা পালন করছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই লটারির নামে জুয়া খেলা চলছে।

এদিকে গত ১ এপ্রিল থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রতিদিন র‌্যাফেল ড্র-এর লটারির নামে জুয়া খেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়া উচ্চশব্দে মাইক বাজিয়ে প্রতিদিন গানবাজনা করায় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক।

বিষয়টি জানতে মেলা অফিসের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের সহযোগি সোলেমান আহমদের সাথে। তিনি বলেন, অনুমোদনের মাধ্যমেই লটারি চলছে। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসন পুরো বিষয় সম্পর্কে অবগত।

মেলা মাঠের সর্বত্র টিকিট বিক্রির বিষয়টি অবগত করলে এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আরোপিত শর্ত মেনে নিয়েই মেলা করছে আয়োজন কর্তৃপক্ষ। তবে, প্রবেশ মূল্যের উপরে র‌্যাফেল ড্র বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শর্তে আছে কিনা-সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে শর্তগুলো পড়ে দেখার আহবান জানান।

মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা  এ বিষয়ে বলেন, প্রবেশ মূল্য দিয়ে টিকিট কিনে ভেতরে আবার টিকিট বিক্রি-এমন বিষয়টি সত্যিই দু:খজনক। তিনি অভিযুক্ত বিষয়ের সত্যতা খুঁজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত ৫ম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সুতরাং এ বিষয়টি আমাদের তদারকির বাহিরে। র‌্যাফেল ড্র এর বিষয়টিও তিনি অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নগরীর শাহী ঈদগাস্থ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স মাসব্যাপী চলছে ৫ম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এর আগে একই প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে ৪র্থ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। হকার মানের পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো মাঠ- এমন অভিযোগ ছিলো ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের। গত ৪ মার্চ আয়োজক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নগরের আনন্দ টাওয়ার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার মেলায় ফুটপাতের পণ্য নয়, বরং ভারত, চীন, মিশর, থাইল্যান্ড, পাকিস্তানসহ দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল থাকবে। মানসম্পন্ন পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয় করা হবে। তবে, সে সময় প্রবেশ মূল্যের উপর র‌্যাফেল ড্র বিষয়ে সংবাদকর্মীদের না জানালেও মেলার শুরু থেকেই চলছে এই লটারী বাণিজ্য। মেলায় ফরেইনার জোন কিংবা বিদেশী স্টল থাকার কথা বলা হলেও গোটা মাঠ জোড়ে বিদেশী প্যভিলিয়ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য