সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমায় কেন্দ্রে সংখ্যা ১৬৯,ঝুকিপূর্ণ ১২৫
মবরুর আহমদ সাজু
সবপ্রস্তুতি সম্পন্ন,সিলেটের ১২ উপজেলায় ভোট গ্রহণ কাল
৮১৬ টি কেন্দ্রে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা
ভোটকেন্দ্র ৮১৫, থাকবেন ১৪ হাজার ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা
সর্বোচ্চ ভোটার গোলাপগঞ্জে ও সর্বনিম্ন ফেঞ্চুগঞ্জে
সিলেট জেলার ১২ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭১০ জন।
পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৮ হাজার ৯০ জন ,মহিলা ভোটার ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২০ জন
রাত পোহালেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। দ্বিতীয় ধাপে সিলেটের ১২ উপজেলায় একযোগে শুরু হবে ভোটযুদ্ধ। নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা-আমেজ তেমনটা না থাকলেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গতকাল শনিবার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে সিলেট জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ। আজ সকাল থেকেই জেলার ১২ উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে পৌছাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে বিজিবি ও র্যাব। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরাও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেট জেলার ১২ উপজেলায় ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। পোষাকধারী ৩ হাজার ৭শ পুলিশ সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে জেলা পুলিশের ২ হাজার ২শ সদস্য ও মেট্রোপলিটন পুলিশের ১ হাজার ৫শ সদস্য। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি ও ২০ জন করে র্যাবের ১টিম স্পেশাল টিম মোতায়েন করা হবে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় ৪ জন করে ৪৮ জন কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান জানান, সিলেটের ১২ উপজেলার মধ্যে ১০ উপজেলায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য ২ হাজার ২শ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ রোববারের মধ্যে সিলেটের প্রতিটি পৌছাবে তারা।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল-মুসা জানান সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে এক বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ৪৪ মোবাইল টিমের পাশাপাশি ২১ টি স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে।
এদিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সিলেটের প্রতিটি উপজেলায় ভোটের সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলার রিটানিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক )সন্দ্বিপ কুমার সিংহ। আজ শনিবার উপজেলা থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌছাবে নির্বাচনী সরঞ্জামাদী।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার গভীর রাত থেকে নগরের প্রবেশ পথসহ মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন, লাগেজ ও ব্যক্তি বিশেষের দেহ তল্লাশি করে যাচ্ছে র্যাব-পুলিশ, বিজিবি ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
নির্বাচন উপলক্ষে সিলেটে মহানগরসহ পুরো সিলেটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, জনস্বার্থ, জনশৃঙ্খলা ও সাধারণ জনগণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। শনিবার মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। এছাড়া সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ভোট গ্রহণের প ১১মার্চ) থেকে ভোটগ্রহণের পরবর্তী ৭দিন (২৫ মার্চ) পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এছাড়া এই নির্দেশনা নির্বাচনে প্রার্থী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচনী এজেন্টদের জন্য এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে না। তবে পর্যবেক্ষক ও পোলিং এজেন্টদের যানবাহনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত ষ্টীকার ব্যবহার করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলার ১২ উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছেন ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৮ হাজার ৯০ জন ও ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২০ জন হলেন মহিলা ভোটার। ১২ উপজেলার ৪ পৌরসভা ও ৯৭ ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৮১৫টি। আর ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৪১৪টি। এর মধ্যে স্থায়ী ভোট কক্ষ ৪ হাজার ৮৬টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৩২৮টি।
এবারের নির্বাচনে ১৪ হাজার ৫৭ জন ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা সোমবার সকাল থেকে ভোট গ্রহণ করবেন। এর মধ্যে রয়েছেন ৮১৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৪১৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৮ হাজার ৮২৫ জন পোলিং অফিসার।
উপজেলাওয়ারী ভোটারদের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১২ হাজার ৭১২ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬ হাজার ৬২৩ জন। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মোট ভোটকেন্দ্র ৯১টি। আর ভোট কক্ষ ৫৪৩টি। স্থায়ী ভোট কক্ষ ৪৮২টি ও ৬১টি হচ্ছে অস্থায়ী ভোটকক্ষ। ৯৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৫৪৩ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ১ হাজার ৮৬ জন পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণ করবেন।
বিশ্বনাথ উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৫৯ জন। পুরুষ ৭৬ হাজার ৫৯৯ জন ও ৭৪ হাজার ৬০ জন হলেন মহিলা ভোটার। ৮ ইউনিয়নের এ উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৭৪টি। ভোট কক্ষ ৩৭৪টি। স্থায়ী ভোট কক্ষ ৩৬৭টি ও ৭টি হচ্ছে অস্থায়ী ভোট কক্ষ। নির্বাচনী দায়িত্বে রয়েছেন ৭৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩৭৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৭৪৮ জন পোলিং অফিসার।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ৭২ হাজার ৬৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬ হাজার ৪৪৬ জন ও মহিলা ৩৬ হাজার ২০৮ জন। উপজেলার ৫ ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩৬টি। ভোট কক্ষ ১৭৬টি। তবে এই উপজেলায় অস্থায়ী ভোট কক্ষ নেই। এছাড়া নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ৩৬ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৭৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৩৫২ জন পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণ করবেন।
বালাগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার ৮০ হাজার ৬০৯ জন। পুরুষ ৪০ হাজার ২২৮ জন ও ৪০ হাজার ৩৮১ জন মহিলা ভোটার। ৬ ইউনিয়নের এ উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৩৪টি। এর মধ্যে ৩৩টি স্থায়ী ও ১টি অস্থায়ী ভোট কেন্দ্র। মোট ভোট কক্ষ ২০৮টি। স্থায়ী ভোট কক্ষ ১৯৩টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ১৫টি। ভোট গ্রহণে থাকবেন ৩৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ২০৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৪১৬ জন পোলিং অফিসার।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার ৯৬ হাজার ৫১৩ জন। পুরুষ ৫০ হাজার ৬৬০ জন ও ৪৫ হাজার ৮৫৩ জন মহিলা ভোটার। ৬ ইউনিয়নের এ উপজেলায় ৩৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ২৫০ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৫০০ জন পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণ করবেন। উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৩৯টি। ভোট কক্ষ ২৫০টি। তবে কোনো অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র নেই।
কানাইঘাট উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৮১টি। ভোট কক্ষ হচ্ছে ৩৭৫টি। এর মধ্যে স্থায়ী ৩৫৯টি ও অস্থায়ী ১৬টি ভোট কক্ষ। মোট ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮ জন। পুরুষ ৮৪ হাজার ৮২৭ জন ও ৮৫ হাজার ২০১ জন হলেন মহিলা ভোটার। ৮১ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩৭৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৭৫০ জন পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণ করবেন। এ উপজেলায় ১ পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩০২ জন। পুরুষ ৯১ হাজার ৪৫৭ জন ও মহিলা ৮৭ হাজার ৮৪৫জন। ৯ ইউনিয়নের এ উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৬৯টি। ভোট কক্ষ ৪২৮ টি। স্থায়ী ভোট কক্ষ ৩৯৭টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৩১টি। থাকবেন ৬৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪২৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৮৫৬ জন পোলিং অফিসার।
জৈন্তাপুর উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার ৬২২ জন। পুরুষ ৫৪ হাজার ৪৯৩ জন ও ৫২ হাজার ১২৯ জন মহিলা ভোটার। ৬ ইউনিয়নের এ উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৪৫টি। ভোট কক্ষ ২৬৯টি। স্থায়ী ২০৮টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৬১টি। ৪৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ২৬৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৫৩৮ জন পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণ করবেন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৭৮টি। ভোট কক্ষ ৪১৭টি। স্থায়ী ৪০২টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ১৫টি। ৭৮ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪১৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৮৩৪ জন পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণ করবেন। এ উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯১ জন। পুরুষ ভোটার ৮৬ হাজার ৮৪৬ জন ও ৮৩ হাজার ৫৪৫ জন হলেন মহিলা ভোটার।
জকিগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৮২ জন। পুরুষ ৭৮ হাজার ৪৫৩ জন ও মহিলা ভোটার ৭৬ হাজার ২৯ জন। ১ পৌরসভা ও ৯ ইউনিয়নের এ উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৭৭টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৩৫৫টি। স্থায়ী ৩৪৬টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৯টি। ৭৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩৫৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৭১০ জন পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণ করবেন।
গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২২ হাজার ৫০০ জন। পুরুষ ১ লাখ ১১ হাজার ৫২৫ জন ও মহিলা ১ লাখ ১০ হাজার ৯৭৫ জন। ভোটকেন্দ্র ১০২টি। ভোট কক্ষ ৫৫৬টি। স্থায়ী ভোট কক্ষ ৪৯৬টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৬০টি। ১ পৌরসভা ও ১১ ইউনিয়নের এই উপজেলায় থাকবেন ১০২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৫৫৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ১ হাজার ১১২ জন পোলিং অফিসার।
বিয়ানীবাজার উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৬১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ৮৪৪ জন ও ৮৬ হাজার ৭৭১ জন হলেন মহিলা ভোটার। ১ পৌরসভা ও ১০ ইউনিয়নের এ উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৮৯টি। ভোট কক্ষ ৪৬৩টি। স্থায়ী ভোট কক্ষ ৪১০টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৫৩টি। এ উপজেলায় ৮৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪৬৩ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৯২৬ জন পোলিং অফিসার ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার খোরশেদ আলম জানান, আসন্ন ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে বর্তমানে নির্বাচনী কাজে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি শেষ।