আগামী দিনের নেত্রী তারা
সারা বিশ্বে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে এগিয়ে থাকা শীর্ষ পাঁচটি দেশের বাংলাদেশ অন্যতম। প্রায় তিন দশক ধরে নারী নেতৃত্বই দেশকে পথ দেখাচ্ছে। গত কয়েকবছর ধরে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেছে অনেক নারীই। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ছাত্র-রাজনীতিতেও নারীর পদচারণা বাড়ছে। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে একসময় চিহ্নিত হত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আর এর কেন্দ্রবিন্দু ছিল ডাকসু। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকায় বন্ধাত্ব তৈরি হয় ছাত্র রাজনীতিতে। তবে আশার কথা হলো, ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ঘোষণা করেছে প্যানেলে। ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি নেত্রীরাও এবার বিভিন্ন প্যানেলে প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্য থেকেই হয়তো বাংলাদেশ পেয়ে যাবে আগামীদিনের জাতীয় নেত্রী।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে ক্যাম্পাস। ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। পিছিয়ে নেই নারী প্রার্থীরাও, চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। এটা দূর্ভাগ্যজনক যে জাতয়ি রাজনীতিতে নারীর অশগ্মরহণের মতো ঢাবি েকেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ উল্লেখ যোগ্য নয়। বেশিরভাগ প্যানলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী প্রার্থীদের স্থান হয়নি। ডাকসুর ২৫টি পদে বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র থেকে মাত্র ২৮ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে ডাকসু নির্বাচনে নারীদের আরও বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ডাকসুর একমাত্র নারী ভিপি মাসুদা খানম ৷ তিনি বলেন,বাংলাদেশের মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। রাজনীতিতেও এগিয়ে আসতে হবে৷ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ৪০শতাংশ। কিন্তু সেভাবে নারী নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না৷ নিজেদের অধিকার রক্ষায় নারীদের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হতে হবে৷ আশা করব ডাকসুতে আরো বেশি নারীর অংশগ্রহণ থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগ প্যানেলে মোট ৭ জন নারী প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার এবং আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে লড়বেন শাহরিমা তানজিনা অর্নি। আর সদস্য পদে লড়বেন রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, নিপু ইসলাম তন্বী, ফরিদা পারভীন এবং তিলোত্তমা শিকদার।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এবং ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং ছাত্র ঐক্যের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ সমর্থিত বামজোটের প্যানেল থেকে নারী প্রার্থী আছেন মাত্র ১ জন। এর মধ্যে ছাত্রদল থেকে কমনরুম এবং ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে লড়ছেন কানেতা ইয়ালামলাম। আর কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সদস্য পদে লড়ছেন শেখ এমিলি জামাল। বামজোটের প্যানেল থেকে রয়েছেন আফনান আক্তার।
ছাত্র ফেডারেশন থেকে জিএস পদে উম্মে হাবিবা বেনজির, জাসদ ছাত্রলীগ থেকে জিএস পদে শাফিকা রহমান শৈলী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মনিরা ইসমাইল মীম এবং সাহিত্য সম্পাদক ইশরাত জাহান লড়ছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী থেকে জিএস পদে সনম সিদ্দিকী, স্বতন্ত্র জোটের হয়ে ভিপি পদে অরণি সেমন্তি খান, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে শ্রবণা শফিক এবং সদস্য নহলি নাফিসা খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে দাঁড়িয়েছেন মালিহা সুলতানা।
তাছাড়া স্বতন্ত্রভাবে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফাহমিদা মজিদ, এজিএস পদে ফারাহ মাহযাবিন, বাংলাদেশ ছাত্র মুক্তিজোটের প্যানেল থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন প্যানেল থেকে কমনরুম এবং ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নাসিমা আক্তার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে তামান্না তাসনিমম এবং সদস্য পদে লড়ছেন ফাতেমা আক্তার।
স্বতন্ত্র জোট প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অরণী সেমন্তি খান পূর্বপশ্চিমকে বলেন, পারিবারিকভাবে বাধ্যবাধকতা না থাকলেও অনেকেই নির্বাচনে আসতে পারছেন না। কারণ, ক্যাম্পাসে এবং সামাজিকভাবে হ্যারেজমেন্টের ভয় আছে। তাই সবার বিষয়টি সামনে আসছে না। নির্বাচিত হলে নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাাসের সার্বিক পরিবেশ চিন্তা করলে আমরা দেখি, ক্যাম্পাস নারীবান্ধব নয়। ক্যাম্পাস তো দূরের কথা, বিভাগের শিক্ষক এবং সহপাঠীদের কাছে অনেক সময় তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কমন রুমের অভাব, ওয়াশরুমের সমস্যা, গ্রন্থাগারে পড়াশুনার সমস্যা- এসব তো রয়েছেই।
ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে বিএম প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী লিপি আক্তার বলেন, ১৭ হাজার ছাত্রীদের মধ্যে নির্বাচনে শীর্ষ প্যানেলগুলোতে কোন নারী প্রার্থী নেই। এটা দুঃখজনক।
ছাত্রদলের প্যানেল থেকে কমনরুম এবং ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কানেতা ইয়ালামলাম পূর্বপশ্চিমকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছে। এতে অনেক ছাত্রীকে শুধু নির্যাতনই নয়, বস্ত্রহরণের শিকারও হতে হয়েছে। এজন্য নারীরা এগিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে। নির্বাচনে যদি তারা জিততে না পারে; তাহলে হলের সিট থাকবে কি-না, ক্লাস করতে পারবে কি-না- এ ধরণের বিভিন্ন শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তারা এগিয়ে আসেনি। নির্বাচনে জয়ী হলে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রত্যায় ব্যক্ত করেন তিনি।