শীতে সিলেটের হাসপাতাগুলোতে বাড়ছে রোগির সংখ্যা

মবরুর আহমদ সাজু
অগ্রাহয়নে শীতের দেখা না হলে ও পৌষে শুরু থেকে সিলেট অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। সন্ধ্যা পড়তেই নামছে কুয়াশা। আর থেমে থেমে হিমেল হাওয়ার দাপটে কনকনে শীতে জবুথবু হয়ে পড়ছে চারদিক। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরো কয়েকদিন পর আবহাওয়া আরো পরিবর্তন হতে পারে সিলেট বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়েও মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে ছিন্নমুল ও দুস্থ মানুষদের কষ্ট বেড়েছে। বিপাকে পড়েছেন শহর ও গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষেরা। গরম কাপড় না থাকায় আগুন জ্বালিয়ে একটু উষ্ণতার পরশ পাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই। তাছাড়া বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরীবিভাগ জানায়, গত দুই-তিনদিন ধরে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। এজন্য শিশু ও বৃদ্ধদের সব সময় গরম কাপড় পড়িয়ে রাখার পাশাপাশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে, শীতার্তদের সহায়তায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে
সিলেট জেলায় ৪৫ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), সন্দ্বীপ কুমার সিংহ। তিনি জানান, এরই মধ্যে তারা বিভিন্ন উপজেলার জন্য এসব কম্বল বরাদ্দও দিয়েছেন। এখন সেখান থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে শীতার্তদের সহায়তায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনে কোন ধরনের সরকারি বরাদ্দ আসেনি বলে জানিয়েছেন, সিসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী ।
এেিদক শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নগরীতে শীতের কাপরের জমজমাট ব্যবসা। গতকাল গত চারদিন ধরে শীতের প্রকোপ বাড়ায় ব্যবসায়ীদের গরম কাপড় বিক্রির হারও বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের শীতের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। শিশুদের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে। ওয়স্টে ওয়াল্ড শপিং সেন্টারের সাধারন সম্পাদক ও মাহদী কালেকশনের স্বত্তাধীকারী জাবেদ আহমদ জানান তাদের এখানে শীতের সব আয়োজন করে রাখা হয়েছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের দেখা গেছে কাশ্মীরি শাল কিনতে। বিক্রির শীর্ষে পাঁচমিনা শাল রয়েছে বলে জানান জাবেদ। নগরীর রেজিস্টারি মাঠের ফুটপাতে ব্যবসা করেন মানিক তিনি জানান, তার এখানে এবার শিশুদের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে। পুরো বছর বসে বসে কাটালেও ডিসেম্বর জানুয়ারির শুরু থেকে ব্যবসা ভালো হচ্ছে বলে জানান মানিক। তিনি জানান, শিশুদের হাত-পা ভরা কাপড়ের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া কম্বলের বিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানালেন জেলা পরিষদের সামনের হকার ফজর আলী। তিনি জানান, অনেক দিন শীতের আশায় ছিলাম। অনেক টাকার মালও কিনে রেখেছি। কিন্তু শীত না আসায় বিক্রি ভালো হচ্ছিল না। ১ জানুয়ারি থেকে শীত ধীরে ধীরে বাড়ায় তাদের বিক্রিও ভালো হচ্ছে। আরও কিছু দিন শীত অব্যাহত থাকলে তার মাল শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জানুয়ারীর শুরুতেই সিলেটে জেঁকে বসেছে শীত। শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। অগ্রাহয়নের শুরুতে দিনের আলো নেভার আগেই নামছে কুয়াশা। কনকনে বাতাস যেন বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের দাপট। শীতের কারণে নগরীতে লোকজনের সংখ্যাও অনেকটা কমে গেছে। দিনে রাতে রাস্তায় আগের মতো তেমন যানজটও দেখা যায় না। স্কুলেও উপস্থিতির সংখ্যা কম বলে জানা গেছে। সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এমনিতেই জানুয়ারিতে শীতের একটা প্রকোপ থাকে। গত বছরও জানুয়ারিতে শীত আক্রমণ করেছিল। এ বছর এর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর থেকে এ বছর শীতের মাত্রা একটু বেশি বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। গড়ে তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস জানা যায়।
আসছে শীত, মেয়ে-জামাইকে দিতে হবে লেপ:
সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীত জেকে বসায় ,আদরের মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে লেপ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন শ্বশুর-শ্বাশুরীরা। সুনামগঞ্জর দিরাই থেকে আসা আখলিমা বেগম ও সাদ্দাম হোসেন শুভপ্রতিদিন কে জানান, আদরের মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে লেপ দিতে তারা সিলেটে লেপ তোশক ক্রয় করতে এসছেন , তিনি জানান বেশ কিছুদিন ধরে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যস্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। তাই বাসা বাড়িতে লেপ-তোশক বাহির করা হচ্ছে। অনেকে আবার মেরামত বা পরিষ্কারে দিচ্ছে। অনেক পরিবার তৈরি করছে নতুন লেপ-তোশক। অনেকে নতুন মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে আগাম পাঠিয়ে দিচ্ছে নতুন তৈরী লেপ।এদিকে নগরীর হাওয়াপাড়া ঘাসিটুলা সোবহানীঘাট, এলাকার দোকান গুলোতে লেপ-তোশক তৈরির ধুনকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পুরোদমেই। ধুনকর কারিগর জামাল জানান, এক সপ্তাহ আগ হতে আমি প্রতিদনই প্রায় ৫-১০টি লেপ অর্ডার পাচ্ছি। এছাড়া আশা করছি এ মাসের শুরুতেই প্রতিদিন ২০-২৫টি অর্ডার পাবো। আমার কাছে প্রতিটি লেপ দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত পাঁচ কেজি তুলা দিয়ে বানিয়ে বিক্রি করছি।কারিগর রয়েল মিয়া জানান, আমরা শীত আসার শুরুতেই লেপ তোশক মোটামুটি অর্ডার পাচ্ছি পাশাপাশি অগ্রিম কিছু লেপ-তোশক বানিয়ে রাখছি। সাধারণত অনেক ক্রেতা রেডিমেট ভাবে এসব ক্রয় করে থাকেন। তিনি আরও জানান, এবার তুলার দাম একটু বেশি হবার কারনে বড় লেপের দাম গত বছরের চেয়ে ১৫০ টাকা হতে ২০০ টাকা বেশি লাগছে। আবার সিঙ্গেল লেপ এ বেড়েছে ১০০ টাকা মত পাশাপাশি কারিগরদের মুজুরি ও এবার একটু বেশি। বৃহ:বার বিকালে জগন্নাথপুর থেকে লেপ তৈরী করতে আসা মাজহারুল ইসলাম বলেন, মাস ছয়েক আগে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তাই মেয়ে-জামাইকে লেপ দেয়ার জন্য এখানে নিতে এসেছি।
হাসপাতালে বাড়ছে রোগী:
এদিকে সিলেটে শীত ও ঠান্ডার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া, নিওমোনিয়া, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গত ৩ দিনে সিলেট সদর ও ওনমানী হাসপাতালে শীতজনিত রোগে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় সহস্রাধিক রোগী। ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আফরোজা বেগম জানান, ঠান্ড লেগে বাচ্চার ডায়রিয়া হয়েছে। ডাক্তার বলছে সময় লাগবে। তাই হাসপাতালে পড়ে আছি। চিকিৎসা নিতে আসা আর এক শিশুর অভিভাবক সালমা জানান, তার ছেলের বয়স ৬ মাস। শীতের কারণে প্রথমে সর্দি, পরে শ্বাসকষ্টে ভুগছে। সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক রোগীকে মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা, আরমান আহমদ শিপলু বলেন শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, কাশি, সর্দিসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে তাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিভাগের অন্যান্য