সিলেট ৫ লাখের অধিক বই বিতরণ,

মাথায় লাল সবুজের পতাকা
চোখে মুখে হাসির ঝিলিক.
সিলেটে নতুন বছর নতুন বই পেয়ে এগিয়ে যাবার প্রত্যয়

মবরুর আহমদ সাজু:
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়; বার্ষিক পরীক্ষার সময় যে দিন যে পরীক্ষা, সে দিন সেই বিষয়ের পুরোনো বইটি জমা দিতে হতো শিক্ষার্থীদের। সেই পুরোনো বই-ই আবার দেওয়া হতো পরের বছরে। সেই বই হাতে পেয়ে কী মন খারাপই না হতো ছোট ছোট শিশুদের। তারা পাতা উল্টিয়ে দেখত কার বইয়ে ক’টি পাতা নেই। মাধ্যমিকে তো টাকা দিয়েই বই কিনতে হতো। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা নতুন বই কিনত। যাদের সাধ্যে কুলোত না তারা পুরোনো মার্কেট থেকে কিনত। যে পড়াশোনা আনন্দের বিষয়, তার শুরুতেই একটি মন খারাপ করা পরিস্থিতি তৈরি হতো।আর নতুন-পুরাতন বইয়ের মিশেলে ক্লাসে পড়াতেও শিক্ষকের সমস্যা হতো,কারো বইয়ে অমুক কবিতা নেই তো কারো বইয়ে একটি গল্পের একটি পৃষ্ঠা গায়েব। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তাও প্রাথমিকে নয় এখন পাচ্ছে মাধ্যমিকেও। আর এই বই উৎসব ২০১০ সালে শুরু হয়।
সময়ের পরিক্রমায়,এবারও কুয়াশার চাদর সড়িয়ে নতুন প্রদীপ উদিত হয়েছে , নতুন বছর নতুন প্রত্যয় আর নতুন প্রজন্মের দিকেই সবার চোখ, কারণ তাদের হাত ধরেই নতুন কিছু আসবে, উন্মুক্ত হবে নতুন নতুন সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনায় ,নতুন বই উৎসবে নতুন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের চিন্তাও মননে সম্ভাবনার চাপ, মাথায় লাল সবুজের পতাকা। চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। হাতে হাতে নতুন বই। বইয়ের কাঁচা সুবাসে উদ্বেলিত খুদে শিক্ষার্থীরা। নতুন বই হাতে পেয়েই নেড়েচেড়ে দেখতে ব্যস্ত একেকজন। হঠাৎ কিছু চোখে পড়তেই পাশের সহপাঠীর সঙ্গে মুখ হাত দিয়ে হাসিতে লুটিয়ে পড়ছে কেউ কেউ। আবার অনেকে বইয়ের ঘ্রাণ শুঁকে দেখছে। এভাবে নতুন বই বিতরণের উৎসবে সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ন্যায় মেতে উঠেছিল পুরো সিলেটের শিক্ষাপ্রাঙ্গণ। শিক্ষার্থীরা জানান,আমরা ভালোফলাফল করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা নতুন প্রজন্ম শেখ হাসিনাকে জানাই হাজারো ছালাম। বিশেষ করে নতুন বছরের শুরুতেই সরকারের দেয়া বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যপুস্তক সময় মতো হাতে দোবার জন্য।
অনুসন্ধানে দেখাগেছে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরীক্ষা ও পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে,তারপরেও সার্বিক ফলাফল আশাব্যঞ্জক, এটিই খুশির বিষয়। আর ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রথম প্রয়াস যে বই বিতরণ উৎসব, সেটি আসলেই বেশ সাড়া ফেলেছে ছেলেমেয়েদের মধ্যে। এ রকম ধারা অব্যাহত থাকলে এবং ছেলেমেয়েদের মাঝে এই উত্সাহ ধরে রাখতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ অন্যরকম হবে। শিশুদের হাতে নতুন বই, চোখে স্বপ্ন এর মধ্য দিয়েই তারা দেখছে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে পথচলা,এমন কথাই সরকারী পাইলট স্কুলের অভিভাবক ব্রেঞ্চে অভিভাবকরা বলেছিলেন।
এবারে বছরের প্রথম দিনটি নির্বাচনের পরে হলেও ছেলেমেয়েরা সকাল থেকেই বাবা-মাকে নিয়ে মাঠে চলে এসেছিল। রঙিন ফিতায় বাধা বই, কারও হাতে বেলুন আর মুখে একরাশ হাসির ঝিলিক নিয়ে তারা বাসায় ফিরেছে।
নগরীর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, রবিবার সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে সিলেটের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই,বিতরণ শুরু করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেই নতুন বই নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে ছোটাছুটি করছে ছেলে-মেয়েরা। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সবার হাতেই নতুন বই। চার রঙের ও আকর্ষণীয় মলাটে বই পেয়ে খুশিতে নেচে গেয়ে বেড়াচ্ছে স্কুলের মাঠে। অনেকেই আবার বই উল্টিয়ে কবিতা ও গল্প পড়া শুরু করে দিয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বলেন, ‘সকাল থেকেই বিভাগের সবকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে বই বিতরণ শুরু হয়েছে। এবছর চাহিদানুযায়ী বই আসায় সব শিক্ষার্থীরাই প্রথম দিনে বই নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদেরকেও বরণ করতে বিদ্যালয়ে ‘শিশু বরণ’ উৎসবও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। মানসম্মত শিক্ষা, জাতির প্রতিজ্ঞা সম্পর্কে সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জী বলেন, নতুন ফুটুক ঝলমলে। কুয়াশা কেটে যাক। অন্ধকারগুলো আলোতে পরিণত হোক। যারা কখনো সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায় না তারা সাহস করেই এগিয়ে যাক সামনে। যোগ্যরা প্রাপ্ত সম্মান পাবে, এটাই তো প্রত্যাশা। নতুন বছরে নতুন বইয়ে বাংলাদেশ চিনুক সবাই। মানসম্মত শিক্ষায় এগিয়ে যাক বিশ্বের সাথে সিলেট। তিনি বলেন আমরাও বিশ্বাস করি, এই ছেলেমেয়েরাই আগামী দিনের বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে, আর তাদের সে যাত্রায় অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আসলে এতসব কর্মযজ্ঞ। জানাযায় ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে এই বই দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয় ।সিলেটে ও পাঠ্যপুস্তক উৎসব,সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেটের সরকারি কিন্ডার গার্ডেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট জেলার বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম। এদিকে সিলেট জেলার প্রায় ৫ লাখের অধিক শিক্ষার্থী বই পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. উবায়দুল্লাহ। সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বাংলা ভার্সনে এবার বই পাচ্ছে সিলেট জেলায় ১ হাজার ৪শ ৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য মিলে মোট ২ হাজার ৬শ ৬০টি বিদ্যালয়ের ৫ লাখ ৩২ হাজার ৪৩ শিক্ষার্থী এবং ইংরেজি ভার্সনের ৩২টি বিদ্যালয়ের মোট ৬ হাজার ২শ ৬৭ শিক্ষার্থী। এছাড়া বইয়ের চাহিদা ছিলো জেলায় বাংলা ভার্সনে মোট ২৫ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩শ ৩৪টি। ইংরেজি ভার্সনে ২৮ হাজার ৮শত ৬০টি বইয়ের চাহিদা ছিলো। চাহিদার সাথে প্রাপ্তির পরিমাণও সমান বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের শিক্ষাবর্ষের জন্য সিলেট বিভাগের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪৭টি নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৬ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৬, সুনামগঞ্জে ২১লাখ ৯৮হাজার ৭২১, হবিগঞ্জে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ২৩২, মৌলভীবাজারে ১৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৮১৬টি বই বরাদ্দ দেয়া হয়।
তিনি বলেন, গত ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল বিদ্যালয়ে চাহিদা অনুযায়ী বই পৌঁছে । ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা। বছরের প্রথম দিনে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এ বছর সমগ্র দেশে বিতরণ করা হবে ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২টি নতুন পাঠ্যবই।

এ বিভাগের অন্যান্য