সুনামগঞ্জে ২ আসনে নবীনদের চ্যালেঞ্জর মুখে প্রবীণরা
সুনামগঞ্জে ২ আসনে নবীনদের চ্যালেঞ্জর মুখে প্রবীণরাসুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনেই নিজ দলের নবীন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চ্যালেঞ্জে জিতে চূড়ান্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে হবে প্রবীণদের। পাঁচটি আসনে প্রবীণদের পাশাপাশি এবার মাঠে রয়েছেন শক্তিশালী অনেক নবীন মনোনয়নপ্রত্যাশী। নানা কারণে অনেক আসনেই মনোনয়ন দৌঁড়ে পিছিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি- দু’ দলের প্রবীণরা। নির্বাচন নিয়ে এমন জটিল সমিকরণ থাকায় এবার আগাম পর্যবেক্ষণ করে সম্ভাব্য ফলাফল নির্ধারণ করা বেশ কঠিন। তবে প্রার্থী যাঁকেই করা হোক না কেন, সার্বিকভাবে জেলার পাঁচটি আসনের চারটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কারণ হিসেবে গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কারের যুগে জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮টিতেই বিজয়ী হয় বিএনপি। আর সদর আসন দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির দখলে থাকায় সেটির ফলাফল নির্ধারণ করবে দলটি একক নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে ওপর।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই, শাল্লা): অতীতে এই আসনে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি দ্বৈত লড়াই হতো আওয়ামী লীগের প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও বিএনপির নাছির উদ্দিন চৌধুরীর মধ্যে। সুরঞ্জিতের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তা উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে এখন এই আসনের সংসদ সদস্য। রাজনীতিতে নবাগত ও বার্ধ্যকের ভারে নূহ্য জয়া সেন দলের ‘খাইখাই’ পার্টির লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্র যদি সেটা আমলে নেয় তবে আগামী নির্বাচনে বিকল্প প্রার্থী আসতে পারে এই আসনে। আর সেই শূন্যস্থান পূরণে জোরোশোরে মাঠে রয়েছেন সিলেট জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি ও মহানগর আ.লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম। এছাড়া আরেক শক্তিমান প্রবাসী রাজনীতিক যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহবায়ক সামছুল হক চৌধুরী বলেন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন চান ছাত্রজীবন থেকে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করে আসছি, প্রবাসে থাকলেও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে দিরাই-শাল্লার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রিয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু হাইকমান্ডের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করি, আমার সকল দিক বিবেচনা করে হাইকমান্ড আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেবে এ আমার বিশ্বাস। সম্ভাব্য এই প্রার্থীকে জয়া সেনের বিকল্প হিসেবে দেখছেন দলের বড় একটি অংশের নেতা-কর্মীরা।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক,সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্যপ্রার্থী
এই আসনে বরাবরের মতো নয় এবারও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সাথে মনোনয়ন লড়াইয়ে রয়েছেন আরেক বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী, ওয়ান ইলিভেনের পরিস্থিতি ডিঙ্গানো সিলেট মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক,ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব চৌধুরী নির্বাচনী এলাকায় দীর্ঘদিন জণগণের কল্যাণে কাজ করে আলোচনায় রয়েছেন দিরাই, শাল্লায় বেশ কাজ করে এলাকায় জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা । এদিকে মাহবুব চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে বলেন নাছির উদ্দিন জাতীয় পার্ট থেকে চলে আসা নেতা, তিনি দিরাই শাল্লায়, একবার পাশ করেছিলেন তবে এবার দেশনেত্রী বেগম খালেদাজিয়া ও তারেক রহমান আশা করি পরিবর্তনর দিকে হাত বাড়াবেন । তিনি বলেন দেশের মানুষ, ভাটির মানুষ পরিবর্তন চায়। আমি সংসদ সদস্য হলে মানুষের জীবন মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখব, তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমাদের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলেন জানান। লড়াইয়ে সুশাসনই আমাদের ভিশন,সুনীতি-জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা বদ্ধ পরিকর ।
সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর): গত নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদপুত্র আজিজুস সামাদ ডনকে সামন্য ভোটে পরাজিত করে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে মান্নানকে ছাড় দেবেন না সামাদপুত্র ডন। সুনামগঞ্জ-৩ আসনে ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যূতে শাহীনূর পাশার সঙ্গে বিএনপির চরম মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিতে চাইছে বিএনপি। জেলা বিএনপির চার সহ-সভাপতি কর্ণেল (অব) আলী আহমদ, আনছার উদ্দিন, ফারুক আহমদ ও নূরুল ইসলাম সাজু বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। তবে আওয়ামী লীগের সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও বিএনপির এম. কয়ছর আহমদ- দল দুটির যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা এই দুই নেতা নির্বাচনে চমক দেখাতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে এই আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রহমান চৌধুরী শাহীন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। পরবর্তীতে পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর): বর্তমানে এই আসনে মহাজোট মনোনীত সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। জোটবদ্ধ অথবা একক, যেভাবেই নির্বাচন হোক- দীর্ঘদিনের ঘাঁটি সদর আসনটি কোন অবস্থাতেই ছাড় দেবে না জাপা। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে লড়াই করতে বর্তমানে মাঠে আছেন দলের জেলা সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জাতীয় কমিটির সদস্য আয়ুব বখত জগলুল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এমামুল কবির ইমন।
এদিকে, সদর আসনে বিএনপির শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক হুইপ অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়া। তিন বারের সাবেক এই এমপির বিপরীতে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন চার বারের উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন ও সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ জেপি। যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানী আহমদও এই আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। নির্বাচনে জাপা, আ.লীগ কিংবা বিএনপি থেকে প্রার্থী যাঁকেই করা হোক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে এই আসনে।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার): এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক। দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে নিজ দলের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মোকাবেলা করতে হয়েছে তাঁকে। প্রতিপক্ষ মোকাবেলায় নিজ বাসায় বোমা বিস্ফোরণের পর ‘বোমা মানিক’ তকমা পেয়েছিলেন সাবেক বামপন্থী এই নেতা। মানিকের টানা দুই আমলের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ নিয়ে ভোটের মাঠে এবার সরব তাঁর পুরোনো প্রতিপক্ষ ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর ছোটভাই ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী। সুনামগঞ্জ-৫ বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মুনসিফ আলী। তবে এই আসনে ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের মোটামোটি ভাল অবস্থান থাকলেও গত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে চরম বিরোধ রয়েছে দলটির। গত উপজেলঅ নির্বাচনে এই আসনের দুটি উপজেলায় জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে অল্প ভোটে পরাজিত হন। ভোটের পর থেকে পরাজয়ের পেছনে বিএনপির বিরোধিতাকে দায়ী করে আসছে জামায়াত। শেষ মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের আপোস রফা না হলে দলটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেবে। আর এতেকরে সুবিধা পাবে আওয়ামী লীগ।
সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ): জেলার বৃহৎ এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দু’দলেই সর্বোচ্চসংখ্যক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, অঢেল কালো টাকা কামানোর অভিযোগ নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাঁচ সম্ভব্য প্রার্থী। তাদের একজন গত নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ রফিকুল ইসলাম সোহেল। অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান সেলিম, সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় মানব সম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামীমা শাহরিয়ার, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার।এদিকে, সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নজির হোসেন সম্প্রতি বিএনপিতে ফেরায় দলের মনোনয়ন লড়াইয়ের হিসাব অনেকটা উলটপালট হয়ে গেছে। নজির হোসেনের পাশাপাশি ভোটের মাঠে রয়েছেন ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিক আহমদ চৌধুরী, তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল ও ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব খান।