প্রথম লড়াইয়ে এগিয়ে কামরান দলের মধ্যেই একঘরে আরিফ
অতিথি প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তারই কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। দলের সভায় প্রার্থী হিসেবে কামরানের নাম ঘোষণার পর তিনিই এগিয়ে যান সবার আগে। কামরানকে বুকে টেনে নিয়ে ঘোষণা দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ঐক্যের। বাহবা পান দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেও। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও দাঁড়িয়েছেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পাশে। অন্যদিকে স্থানীয় বিএনপিতে একঘরে হয়ে পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বর্তমান মেয়র ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আরিফুল হক চৌধুরী। মনোনয়ন দিতে দলীয় বৈঠক হলেও তীব্র বিরোধিতার মুখে ঘোষণা করা হয়নি প্রার্থীর নাম। কৌশল হিসেবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের চিত্র দেখার কথা বলা হলেও স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয় বিএনপির ঘরের আগুনে আরও ঘি ঢালা হবে। সুযোগ বুঝে জামায়াতে ইসলামীর
সম্ভাব্য ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরও আটঘাট বেঁধে নেমেছেন নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে তিনি চান মনোনয়ন, না হলে নির্বাচন করবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। সব মিলিয়ে কোণঠাসা আরিফ।
সহজ হিসেবে, দলীয় ঐক্য ও মনোনয়ন পাওয়ার প্রথম লড়াইয়ে পরিষ্কার তফাতে এগিয়ে গেছেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। কামরানের জন্য কঠিন ছিল স্থানীয় সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীকে আন্তরিকভাবে পাশে পাওয়ার বিষয়টি। নৌকা প্রতীকের দাবিদার হওয়ার পাশাপাশি বেশ ভালোভাবেই স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের ‘মান’ ভাঙানোর কাজ করে চলেছেন কামরান। জেলা ও মহানগর কমিটির ৪১ নেতার সঙ্গে আলোচনা করেই ঘোষণা করা হয়েছে তার নাম।
অন্যদিকে স্থানীয় বিএনপির নেতারা তাদের পাঁচ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দলীয় বৈঠকে। আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা সবাই। তাকে ছাড়া বিএনপির যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তারা। তাদের প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় কর্মসূচিতে পাওয়া যায়নি আরিফকে। দলের নেতাকর্মীদের পাত্তা দেননি। আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সঙ্গে চালিয়েছেন দহরম-মহরম। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিএনপিপন্থি কাউন্সিলরদের কোণঠাসা করে রাখারও অভিযোগ করা হয়েছে। এ অভিযোগ করেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। মেয়রের বিদেশ গমন এবং কারান্তরীণ সময়ে প্যানেল মেয়র হিসেবে কয়েস লোদী ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও কৌশলে আরিফুল হক চৌধুরী অন্যজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে তার অভিযোগ। বিষয়টি একসময় আদালতে গড়ালেও চেয়ার পাননি লোদী। আরিফ কারান্তরীণ থাকার সময়ে সরকারি কর্মকর্তা চালিয়েছেন নগর ভবন। সুযোগ বুঝে কেন্দ্রের কাছে সব ক্ষোভই উগরে দিয়েছেন লোদী। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও আরিফকে ছাড় দিতে নারাজ।
এদিকে আরিফের সমর্থকরা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও বিরোধী বিএনপি নেতাদের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তুলেছেন। এ নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে। কয়েস লোদীকে নিয়ে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান প্রচার চালাচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ।
এ বিষয়ে কয়েস লোদী বলেন, আমার নামে মামলার পর মামলা। যে বিষয়ে আমি জড়িত নই, সে বিষয়েও মামলা। এসব মামলা কে করেছে? আওয়ামী লীগ। আর আমাকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে। যারা নিজেরাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত করছে, তারাই এসব ছড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদের আগে শুক্রবার আমার এলাকায় নামাজ পড়তে আসেন সাবেক মেয়র কামরান সাহেব। মুসল্লিরা তাকে স্বাগত জানালে তাদের নিয়ে তিনি আমার অফিসে আসেন। একজন কাউন্সিলরের অফিসে তিনি আসতেই পারেন। বিরোধী রাজনীতি করি বলে তো তাকে আমি তাড়িয়ে দিতে পারি না। তা ছাড়া তার অধীনে ১০ বছর কাউন্সিলর ছিলাম আমি, একটা স্বাভাবিক সৌজন্যতাবোধ আছে। এটা নিয়ে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তারা রাজনৈতিক সম্প্রীতি সম্পর্কে জানেন না কিংবা তারা কোনো কারণে হীনম্মন্যতায় ভুগছেন।
এদিকে আরিফ শিবিরে হতাশা নেমে এলেও শহর মাতাচ্ছেন কামরানের অনুসারীরা। নগরীতে শুক্রবার রাতেই শুরু হয় আনন্দ মিছিল। বিভিন্ন ব্যানারে শনিবারও মিছিল অব্যাহত রাখেন আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগের কর্মীরা।
সিপিবি-বাসদ জোটের মেয়র প্রার্থী আবু জাফর : সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে সিপিবি-বাসদ জোট। শনিবার দুপুরে সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে বাসদের জেলা সমন্বয়ক আবু জাফরের নাম ঘোষণা করেন জোটের নেতারা। সিপিবি জেলা শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান খোকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জোটের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।