ওসমানীনগরে একটি সেতুর অভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ১২০টি পরিবার

বর্ষায় নৌকা এবং গ্রীষ্মে সাঁকোই একমাত্র ভরসা দৌলতপুর গ্রামবাসীর:

 

সিলেটের ওসমানীনগরে একটি সিতুর অভাবে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এক গ্রামের ১শ ২০টি পরিবারের সহ¯্রাধিক মানুষ। উপজেলার উন্নয়ন বঞ্চিত পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের অবহেলিত সেই গ্রামের নাম দৌলতপুর। দৌলতপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়ি নদীর ওপর একটি ব্রীজের অভাবে বর্ষায় নৌকা এবং গ্রীষ্মে সাঁকোই একমাত্র ভরসা। স্বাধীনতা পূর্ব থেকে স্বাধীনতা উত্তর কোনো সরকারই গ্রামবাসীর কষ্ট লাগবে সরাসরি যোগাযোগ ব্যস্থার একমাত্র পথ বুড়ি নদীর ওপর সেতু নির্মাণে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। রোগ বালাই আর যেকোনো দুর্ঘটনায় সেতু না থাকার কারণে অকালেই ঝরে পড়েছে অনেক প্রাণ। বর্ষা কালে নৌকা আর গ্রীষ্মে বাশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের শিক্ষার্থীরা যেতে হয় বিদ্যালয়ে। যুগযুগ ধরে গ্রামের লোকজন একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলে নদীর ওপর ৬০ ফুট দীর্ঘ একটি ব্রীজ নির্মাণের দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরজমিন পরিদর্শন কালে জানা যায়, দৌলতপুর গ্রামে প্রায় ১২০টি হতদরিদ্র পরিবারের বসবাস। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অবহেলিত এই গ্রামের মানুষ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। গ্রামের একদিকে বুড়ি নদী অন্যদিকে সাদিখাল। গ্রামবাসী বেরুতে হলে স্থানীয় বুড়ি নদী পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু নদীতে কোন ব্রীজ না থাকায় বর্ষায় নৌকা এবং গ্রীষ্মে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। যোগাযোগ ব্যবস্থার করুণ দন্যতার কারণে এলাকায় শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হারও বেশি। বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৬ মাস বিদ্যালয়ে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। গ্রীষ্মে বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে ছোট শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। কয়েক বছর পূর্বেও গ্রামটিতে এসএসসি পাশ করা কোন শিক্ষার্থী পাওয়া যেত না।
গ্রামবাসীর এই দূর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে সম্প্রতি আবারও একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
কিয়ামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র দৌরতপর গ্রামের ইমন দত্ত বলে, বর্ষকালে নৌকা ডুবি আর শীতকালে বাঁশের সাঁকো থেকে পরে যাওয়ার ভয়ে বেশীর ভাগ দিন বিদ্যালয়ে যাইনি।
দৌলতপুর গ্রামের সরকারি চাকুরিজীবি মতি লাল দত্ত বলেন, ১৯৯৬ সালে পর্যন্ত আমিই একমাত্র এই গ্রাম থেকে এসএসসি পাশ করি। বর্ষায় নৌকা ছাড়া কেউ বেরুতে পারে না বলে প্রায় ৬মাস বিদ্যালয়ে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। শুকè মৌসমে বাঁশের সাকো থাকলেও ছোট শিশুরা সেই সাঁকো বেয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। অন্তত গ্রামের শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে জরুরী ভিত্তিতে একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
একই গ্রামের রেজন আহমদ বলেন, ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আমরা জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে আবেদন জানিয়েছি। আশা করি গ্রামবাসীর কষ্ট দূরিকরণে তারা কার্যকরী ব্যবস্থা নিবেন।
পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ.মতিন গেদাই বলেন, দৌলতপুর গ্রামটি খুবই অবহেলিত। একটি ব্রীজের অভাবে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।
ওসমানীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে বুড়ি নদীর ওপর ৬০ ফুট লম্বা একটি ব্রীজ নির্মাণের নিমিত্তে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ পাওয়া গেলে প্রল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য