বর্তমানের মাঝে অপ্রত্যাশিত কিছু পরিবর্তন এসেছে :আসমা জান্নাত মনি:
নববর্ষ আমাদের জাতীয় উৎসব। আমাদের জাতীয় চেতনা তথা একান্ত বাঙালি সত্ত্বার সঙ্গে পহেলা বৈশাখ অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেয়। এদিন আমরা কোনো বিশেষ ধর্ম-বর্ণ নয় বরং একটিমাত্র অখন্ড বাঙালি সত্তা এই বোধে উত্তীর্ণ হতে পারি। এ দিনটিকে সামনে রেখে শিশুরা জানতে পারে বাঙালির ইতিহাস। নববর্ষ আমাদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। সর্বোপরি নববর্ষের প্রেরণায় আমাদের মধ্যকার সুপ্ত মানবিক মূল্যবোধ নতুনভাবে জাগ্রত হয়, মানুষে মানুষে গড়ে ওঠে সম্প্রীতি।
মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথ ধরে সব কিছুতেই লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। এগুলোর মধ্যে কিছু ইতিবাচক আবার বেশকিছু নেতিবাচক। বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাঙালি জনগণ নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতি-নীতির মাধ্যমে এ উৎসব পালন করে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবকে দূষিত করছে। নাচ-গান, মেলা ও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার স্থান দখল করছে বিদেশি সংস্কৃতি। এতে নববর্ষ উদযাপনের প্রকৃত স্বাদ ও তৃপ্তি থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। উৎসব উদযাপনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাণিজ্যিকীকরণ ও অতিরিক্ত উম্মাদনা উৎসবের মূল আনন্দকে মলিন করে দিচ্ছে। মানুষ নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ছে। সত্যিকার অর্থে আগেকার দিনের নববর্ষ এবং বর্তমানের মাঝে অপ্রত্যাশিত কিছু পরিবর্তন এসেছে; যা কিনা বাঙালি জাতি এবং তার নিজস্ব সংস্কৃতির উপর হুমকি স্বরূপ।নববর্ষের উৎসবের সাথে যদিও আবহমান গ্রামবাংলার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তবে বর্তমানে গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে বর্ষবরণ উৎসবের আবেদন শহরগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর “এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো” গানের মাধ্যমে রাজধানীর বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়। উৎসবের মূল আয়োজক ছায়ানট পহেলা বৈশাখ ভোরে এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। রাজধানীর বর্ষবরণ উৎসবের অন্যতম অনিবার্য অংশ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’।
নববর্ষ আমাদের জীবনে কেবল মাত্র একটি উৎসব নয় বরং এটি একটি চেতনার প্রতিরূপক। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিয়ে নববর্ষ আমাদেরকে উজ্জীবিত করে একান্তই মানবতাবোধে। এ দিনটি আমাদের দরিদ্র, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রেরণা যোগায়। নববর্ষ একদিকে যেমন নির্মল আনন্দের খোরাক, অন্যদিকে তেমনি একটি চেতনার ধারক। আর তাই কোনো সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস যেন আমাদের ঐতিহ্যকে গ্রাস করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রত্যেক বাঙালিকেই সচেতন হয়ে উঠতে হবে।