ফেঞ্চুগঞ্জ নির্বাচনে গণসংযোগে ব্যস্ত প্রার্থীরা :২৯ মার্চ ভোট উৎসব
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী নতুন দুটি ইউনিয়ন ভাসছে ভোটের উৎসবে। আগামী ২৯ মার্চ একযোগে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ভোটের উৎসব চললেও নতুন দুই ইউনিয়নের ভোটারদের আগ্রহ একটু বেশিই। আইনি জটিলতায় গত কয়েক বছর নির্বাচন আটকে ছিল। ফলে ৪ নম্বর উত্তর কুশিয়ারা ও ৫ নম্বর উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদপ্রার্থীদের প্রচারে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীরা গভীর রাত পর্যন্ত ঢোল-বাদ্য নিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীদের দ্বারে দ্বারে। ভোর না হতেই প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের কাছে। গণসংযোগের পাশাপাশি চলছে উঠান বৈঠক। বাধ্যযন্ত্র বাজিয়ে পাড়া-মহল্লা মাতিয়ে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিনই থাকছে সভা-সমাবেশ। সেখানে প্রার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন। ভোটাররাও প্রার্থীদের নানা দিক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে বাড়ির আঙ্গিনায় অর্থাৎ যেখানে মানুষের জটলা সেখানেই চলছে প্রার্থীদের নিয়ে বিশ্লেষণ। বলাবলি হচ্ছে কাকে ভোট দেয়া উচিত, কাকে উচিত নয়। এতে শরিক হচ্ছেন যুবক-কিশোর তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে প্রৌঢ়রাও। তবে দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে আনন্দের মাত্রাটা বেশিই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য দলীয়ভাবে নেয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা।
৩৫টি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়ন দুটি ২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয়। এ সংক্রান্ত গেজেট হওয়ার ৭ বছর পর এ নির্বাচন হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে এলাকাবাসীর না পাওয়ার কষ্ট ভোটের উৎসবে ঢাকা পড়েছে। দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও এতে প্রাধান্য পাচ্ছে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত আচরণ ও চরিত্র। ভোটাররা বলছেন, যাকে আপদে-বিপদে জনগণ কাছে পেয়েছে, পাবে তাকেই তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
উপজেলার ২নং মাইজগাঁও ইউনিয়নের দনারাম, রোকনপুর, নয়াগাঁও, নারায়ণপুর, চাঁনপুরন এলাকা ও ১নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের ইলাশপুর, ছালেপুর, পূর্বকান্দি, গাজীপুর, খিলপাড়া, খিলপাড়া দক্ষিণ, দিনপুর, আটঘর, কোনাপাড়া, কটালপুর, ডন্ডি, মাঝপাড়া, মুহিদপুর, তেরাকুড়ি, ফকিড়পাড়া ও পাঠানচক গ্রাম নিয়ে ৪নং উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়ন গঠিত। জনসংখ্যা ২০ হাজার ৫৬৩ জন এবং ভোটার ১২ হাজার ৩২৭ জন। চেয়ারম্যান, মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্যপদে ৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে ৬ প্রার্থী হচ্ছেন- সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান (আনারস), জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমদ জিলু (ধানের শীষ), যুক্তরাজ্য প্রবাসী লুদু মিয়া (নৌকা), যুক্তরাজ্য প্রবাসী মনির আলী (মোটরসাইকেল) স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আপ্তার আলী (ঘোড়া), শ্রমিক নেতা মো. বসারত আলী (অটোরিকশ)। মহিলা সদস্যপদে ১০ ও সাধারণ সদস্যপদে ৪৬ জন ভোটযুদ্ধে মাঠে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী লুদু মিয়া বলেন, নির্বাচিত হলে আমার সম্মানী ভাতাও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করব। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে নিয়ে গরিব কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নেব। চেয়ারম্যান নয় সেবক হিসেবে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।
তিনবারের চেয়ারম্যান আশির দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা ফজলুর রহমান বলেন, ২৫ বছর থেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের সেবক হয়েই থাকতে চাই। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্যপদে আপেল প্রতীকের প্রার্থী শাহিন চৌধুরী বলেন, ডন্ডিপাড়া ও কটালপুর উত্তরপাড়া নিয়ে আমার ওয়ার্ড। নির্বাচিত হলে আমি এই ওয়ার্ডের কল্যাণে কাজ করে যাব।
১নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মল্লিকপুর, কুতুবপুর, লামা, লামা গঙ্গাপুর, গঙ্গাপুর গয়াসি, উজান গঙ্গাপুর ও ৩নং ঘিলাছড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর, মানিকোনা দক্ষিণ, মানিকোনা পশ্চিম-১, মানিকোনা পশ্চিম-২, ভেলকোনা, মানিকোনা পূর্ব, সুড়িকান্দি ও শাইলকান্দি গ্রাম নিয়ে ৫নং উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন। ২০ দশমিক ৪০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে এ ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ২০ হাজার। ভোটার ৯ হাজার ৬৫৩ জন। চেয়ারম্যান, মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য মিলিয়ে ৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, মহিলা সদস্যপদে ৯ জন ও সাধারণ সদস্যপদে ৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা এপিপি জসীম উদ্দিন আহমদ (নৌকা), উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ এমরান উদ্দিন (ধানের শীষ), স্বতস্ব প্রার্থী আতিকুর রহমান মিটু (ঘোড়া), মো. আবদুল ওয়াদুদ (আনারস) ও সত্য কুমার বিশ্বাস (মোটরসাইকেল)।
মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা এপিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচিত হলে ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়নে পরিণত করতে চাই। কৃষিবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনব। হাওর-বাঁওড় বেষ্টিত এ ইউনিয়নের উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হবে। সাবেক ছাত্রনেতা উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ এমরান উদ্দিন বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় জনগণ নীরব ভোটবিপ্লবের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের সব অন্যায়ের জবাব দেবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হব। সত্য কুমার বিশ্বাস বলেন, জনগণই আমার সম্বল। নির্বাচনে হার-জিত থাকবেই। আমি বিজয়ী না হলেও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।
৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য ফাতেহা বেগম বলেন, আমাকে ভোট দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করলে আমার অসমাপ্ত কাজ আগে শেষ করব। পর্যায়ক্রমে নারীদের উন্নয়নে আমার পরিকল্পনা রয়েছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৩ ইউনিয়ন ছিল। জনগণের সুবিধার্থে ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল এগুলো ভেঙে ৫ ইউনিয়ন করা হয়। ওই বছর ২৯ নভেম্বর উত্তর ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা জামাল মিয়া নতুন দুই ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত গেজেটকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। ফলে আইনি জটিলতার ফাঁদে আটকে যায় নির্বাচন। দুই ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। ৪ নম্বর উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল্লাহ মো. সাইদুর রহমান শামীমকে ও ৫ নম্বর উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের বিআরডিবির কর্মকর্তা কামাল আহমেদকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়। যুক্ত হয় নাগরিকদের দুর্ভোগের নতুন মাত্রা। নানা কাজে প্রশাসকদের কাছে ধরনা দিতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয় নাগরিকদের।
প্রশাসকরা সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় নানা কাজে তারা ব্যস্ত থাকায় সাধারণ মানুষের হয়রানিতে যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন সমস্যা। নাগরিক সেবা পেতে মানুষকে কুশিয়ারা নদী পার হয়ে যেতে হয় দক্ষিণ পারে। দুর্ভোগ আর ভোগান্তির মধ্য দিয়ে নাগরিক সেবা নিতে হচ্ছিল উত্তর কুশিয়ারা অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে। কথা হয় উত্তর কুশিয়ারা অঞ্চলের মানিকোনা গ্রামের খালেদ আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদীপথ পেরিয়ে কয়েক কিলোমিটার অতিক্রম করে সেবা নিতে হচ্ছিল। ফলে নতুন ইউনিয়ন হওয়ার পর বাসিন্দারা খুশি ছিল। কিন্তু সুযোগসন্ধানী একটি চক্র মামলা করে নির্বাচন আটকে দেয়। দুর্ভোগ রয়ে যায় আগের পর্যায়েই। গঙ্গাপুর গ্রামের জুনেদ আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন পর ভোট উৎসব শুরু হয়েছে। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে জনসাধারণের দুর্ভোগের অবসান হবে। মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল বারী বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। কুশিয়ারা নদীই ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে।
২নং মাইজগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়লে ফয়োর ট্রাস্ট ইউকের সাবেক সভাপতি ইমরান আহমদ চৌধুরী এবার আনারসর্মাকা নিয়ে স্বতন্ত্র র্প্রাথী হিসেবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতে পারেন একমাত্র তার সামাজিক নিরবিচ্ছন্ন কাজের জন্য । এলাকার লোকজন তাকে উদীয়মান তরুন হিসেবে দেখছেন গণসংযোগে তিনি বলছেন প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের মিশন তিনি বলেন অবহেলিত এই ইউনিয়ন কে মডেল ইউনিয়নে রুপান্তরিত করতে যা যা প্রয়োজন সবকিছুই করার জন্য তিনি কাজ করবেন বলে জানান