খালেদা জিয়া ও তারেক রাষ্ট্রীয় অপরাধী: আদালত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নামসর্বস্ব জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অনুকূলে দুই কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা স্থানান্তর করেছেন। এর দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। সরকারি এতিম তহবিলের টাকা নিয়ম অনুযায়ী এতিমদের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত ছিল; কিন্তু তা করা হয়নি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রকাশিত আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রকাশিত এক হাজার ১৬৪ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ মামলার ছয় আসামি প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়েছেন। তারা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। অর্থনৈতিক দুর্নীতি রাষ্ট্রের অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে এবং এর খারাপ প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রমিত হয়।
বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি সোমবার প্রকাশের পর গ্রহণ করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও মামলার বাদীপক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী।
রায়ে বলা হয়, খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার ছয় আসামিকে অর্থদণ্ডের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। ছয় আসামির প্রত্যেককে সমান অঙ্কে এই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, নথি পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয় খালেদা জিয়া এ দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বীকৃত মতেই সরকারি কর্মচারী। বাকি উপাদানগুলো এই মামলায় উপস্থিত আছে বলে ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে। ফলে খালেদা জিয়ার পক্ষে যে সব যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে তা বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণ করার কোনো কারণ নেই।
মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে এতিম তহবিলের দুই কোটি ৭১ লাখ ৬৩৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পরিমাণের দিক থেকে এর বর্তমান মূল্য অধিক না হলেও ঘটনার সময়ে ওই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে কোনো এতিম খানার অস্তিত্বও পাওয়া যায়নি। সেখানে কোনো এতিম বসবাস করে না। এতিমখানার কোনো দালানকোঠা বা স্থাপনা নেই। ফলে আসামিদের কোনো যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রের যুক্তি গ্রহণযোগ্য।
সবকিছু বিবেচনা করে এটা প্রতীয়মান হয় যে, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯ ও ১০৯ এবং দুদকের আইনের ৫(২) ধারা প্রমাণিত হয়েছে। ৪০৯ ধারার বিধান মতে, সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা যে কোনো বর্ণনায় কারাদণ্ডের মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। আসামিরা একে অন্যের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন এবং সে কারণে তাদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন। তবে আসামিদের বয়স ও সামাজিক অবস্থান এবং আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় গ্রহণ করে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা সমীচীন হবে না বলে আদালত মনে করেন। আসামি খালেদা জিয়া এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক দলের কর্ণধার, বয়স্ক নারী, শারীরিক ও সামাজিকতা বিবেচনায় তাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ বাকিদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া তার বড় ছেলে চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি বিএনপি নেতা কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দীন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সাজা ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা পাঠানো হয়।
৬৩২ পৃষ্ঠা রায়ের দিন পড়া হলেও ১১ দিন পর সোমবার বিকেলে এক হাজার ১৭৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করা হয়। এরপর রায়ের অনুলিপি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীর কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর সেটা সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এজে মোহাম্মদ আলীর চেম্বারে নিয়ে আসেন আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া।