একুশে গ্রন্থমেলার দ্বার খুলছে
বছর ঘুরে আবারও হাজির হচ্ছে প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা। পেরেকের শব্দ ও নতুন রঙের ঝাঁজালো গন্ধ মনে করিয়ে দিচ্ছে সে কথাই। চেনা দৃশ্যে রঙিন হয়ে উঠছে একাডেমি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এ বছরও বিস্তৃত হয়েছে মেলার পরিসর। প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় আয়োজন করা হয়েছে এবারের গ্রন্থমেলা। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া এক ঘণ্টা সময় বাড়ায় মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং খুলবে দুপুর ৩টায়। তবে শুক্র ও শনিবার শুরু হবে বেলা ১১টা থেকে। আর ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। গতকাল দুপুরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮ উপলক্ষে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমদ। তিনি বলেন, এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় পরিসরও বেড়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২ প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩ প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার ৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩৬ ম্যাগাজিনকে।
তিনি আরও বলেন, মেলায় বড় ও দৃষ্টিনন্দন মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ থাকছে। শারীরিকভাবে অসুবিধাগ্রস্থ ও প্রবীণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে হুইলচেয়ারের সংখ্যাও গতবারের চেয়ে এবার বাড়ানো হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে তিনটি ও বাংলা একাডেমি অংশে থাকছে দুটি ক্যান্টিন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে উদ্যান ও একাডেমি উভয় অংশের স্টলগুলোতে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পর্যাপ্ত মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে জমি। প্রায় এক লাখ বর্গফুট এলাকায় ইট ও বালু দিয়ে অস্থায়ী রাস্তা বা উন্মুক্ত প্রান্তর নির্মাণ করা হয়েছে। এক হাজার বর্গফুট জায়গায় টাইলস দিয়ে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা অজু ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সদস্যসচিব জানান, গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটি মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের ছয়টি পথ থাকছে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশে থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। এ ছাড়া মেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীরা। নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে ২৫০ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকছে এবারের গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। তবে পেমেন্ট বিকাশে করলে অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ কমিশন পাওয়া যাবে বলে জানান বিকাশের প্রধান নির্বাহী (সিইও) কামাল কাদের। বইমেলার সব স্টলেই বিকাশে পেমেন্ট করা যাবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। এর মাধ্যমে বই কিনলে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় মিলবে। গতবারের মতো এবারও মেলার ইভেন্ট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে নিরাপদ ইভেন্টস। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, মেলায় আগত মানুষের বসার স্থানসহ নান্দনিক ফুলের বাগান নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি থাকছে ওয়াইফাই সুবিধা। সেই সঙ্গে গতবারের ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আরও সুন্দর ও পরিপাটি করে মেলাকে সাজানো হয়েছে। এবারও মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শিশুদের জন্য থাকছে শিশুচত্বর। এ কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকছে। এ ছাড়া ভাষা শহীদ ও গুণী ব্যক্তিদের নামে থাকছে বিভিন্ন চত্বর। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় মাসব্যাপী গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে মেলা সামনে রেখে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি একটি ওয়েবসাইট ও একটি মোবাইল অ্যাপও তৈরি করেছে। ওয়েবসাইট ঠিকানা নধ২১নড়ড়শভধরৎ.পড়স। এতে একসঙ্গে প্রায় দুই লাখ পর্যন্ত হিট করা যাবে। আর মোবাইল অ্যাপটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, শ্রীলংকা, ভারতসহ আট দেশের ১৫ কবি-লেখক ও বুদ্ধিজীবী অংশ নেবেন।