সাত পুলিশকে ৩ ঘণ্টায় ১৭ লাখ টাকা দিয়েছিলেন গফুর!

টেকনাফে সেনাবাহিনীর হাতে ১৭ লক্ষ টাকাসহ ৭ ডিবি পুলিশ সদস্য আটক হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে কক্সবাজারে ডিবি পুলিশের সদ্য বহিষ্কৃত ৭ পুলিশ সদস্যের অপকর্মের বিষয়টি। সেই সাত পুলিশ কক্সবাজার থেকে গফুর আলম নামের এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায়। মধ্যরাতে ৩ ঘন্টার নোটিশে গফুরকে ছাড়াতে তার ভাই ১৭ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ জোগাড় করেন। এতো অল্প সময়ে এতো টাকা জোগাড় নিয়েও চলছে বেশ আলোচনা।

দেশজুড়ে আলোচিত এই ঘটনার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অনেক অজানা তথ্য।

গফুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। টেকনাফ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের জালিয়া পাড়ার মৃত আবদুল গফুরের ছেলে মোঃ গফুর আলম। শুধু গফুরই নন, তার পুরো পরিবারই দেশের ইয়াবা সরবরাহের অন্যতম বড় সিন্ডিকেট। তার অন্য ৪ ভাইয়ের মধ্যে মিয়া হোসেন, মনিরুজ্জমান লেডু, মোঃ জাফর ওরফে টি টি জাফর ও নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারা সবাই মিয়ানমার থেকে জামাল কোম্পানি নামের এক ইয়াবা কারখানার মালিকের ইয়াবা ডিলার হিসেবে বাংলাদেশে বিপণনের দায়িত্ব পালন করেন।

গফুরের ৫ ভাইয়েরই রয়েছে শত কোটি টাকার সম্পদ। অথচ বছর চারেক আগেও টেকনাফ উপরের বাজার এলাকায় মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে স্যান্ডেল ও জুতা বিক্রি করে চলতেন তারা। কয়েক বছরের ব্যবধানে ইয়াবা ব্যবসা ও হুন্ডি ব্যবসা করে তারা হয়ে উঠেছেন অবৈধ কোটি কোটি টাকার মালিক।

 

গফুরের বড় ভাই জাফর আলম ওরফে টি টি জাফর হলেন বাংলাদেশের অন্যতম হুন্ডি ব্যবসায়ী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ১০ জন অর্থপাচারকারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ীর তালিকার শীর্ষে রয়েছে এই জাফরের নাম। ব্যাংকের টাকা টিটি করার মতো জাফরকে টাকা দিলে মিয়ানমারে পাওয়া যায়, তাই সে টি টি জাফর নামে পরিচিত।

টেকনাফ দিয়ে ইয়াবা, স্বর্ণ চোরাচালান ও মানব পাচারের যতো টাকা অবৈধ লেনদেন হয় তার সিংহভাগ হয় এই টি টি জাফরের মাধ্যমে। ২০১৪-২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের সব অবৈধ লেনদেন হয় এই জাফরের মাধ্যমেই।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা আসা ও ইয়াবার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে জাফরের মাধ্যমেই বেশি টাকা পাচার হয়।

কক্সবাজারের পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া ৭ ডিবি পুলিশ সদস্য গোপনে কক্সবাজার শহর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা পাচারকারী গফুরকে আটক করে। কিন্তু ঐ ৭ ডিবি পুলিশ গফুরের অবৈধ অর্থের লোভে পড়ে তাকে অফিসে না এনে অন্য জায়গায় আটকে রেখে টাকা আদায় করে।

গফুর আলম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবা পাচারকারীর তালিকায় তাদের ৫ ভাইয়ের নাম থাকার কথা  স্বীকার করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষরা তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্র করে তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে।

ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত নন বলে দাবি করেন গফুর।

আলোচিত এই ব্যবসায়ী তার বড় ভাই টি টি জাফর আলমের হুন্ডি ব্যবসায়ীর তালিকায় থাকার কথাও  স্বীকার করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, তার ভাই টি টি জাফরের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

 

গফুর আলম তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ব্যাপারে থানায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। দেশজুড়ে আলোচিত এই ঘটনায় কেন তিনি এখনো আইনের আশ্রয় নেন নি তা জানতে চাইলে গফুর পরিবর্তন ডটকমকে জানান, অহেতুক ঝামেলা এড়াতেই তারা আইনের আশ্রয় নেন নি।

টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) শেখ আশরাফ উজ জামান  জানিয়েছেন, গফুর এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেন নি। অভিযোগ পেলে তা গ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত সুপার আফরুজুল হক টুটুল  জানান, ডিবি পুলিশের একটি টিম তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী গফুর আলমকে আটক করে তা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়েই ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। পরে তারা সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এতে দেশ জুড়ে পুলিশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এই ঘটনায় ঐ ৭ পুলিশ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়াও ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সূত্র পরিবর্তন ডটকমের

এ বিভাগের অন্যান্য