লাভ ডায়েরি: সব ভালো যার, শেষ ভালো তার/ কে এন দেয়া /
পাঠকের জন্য, পাঠকেরই ভালোবাসার কাহিনী নিয়ে আমাদের আয়োজন “। মিষ্টি একটা প্রেম বা বিয়ের গল্প সবার জীবনেই থাকে। আপনারও কি আছে এমনই একটি দুষ্টু-মিষ্টি ভালোবাসার কাহিনী? তাহলে দারুণ কিছু ছবি সহ যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের সাথে। আপনার ভালোবাসার সেই মিষ্টি কাহিনী ছাপা হবে , পাতায়জানবে সারা বিশ্ব। নিজের ভালোবাসার কথা সকলকে জানাতে চাইলে ছবি সহ যোগাযোগ করুন আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। পেজ লিঙ্ক-
পরিচিত মানুষের বাইরে সহসা কাউকে আমরা ফেসবুকের ফ্রেন্ড লিস্টে যোগ করি না। কাজী তানিয়া ইমতিয়াজের বেলাতেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। তবে ইমতিয়াজ সেজান সানি নামের ছেলেটির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট তিনি কী ভেবে যেন তিনি অ্যাকসেপ্ট করে নেন। এরপর টুকিটাকি কথাবার্তা তো আগাতেই থাকে। ইনবক্সে কারো সাথে তেমন একটা কথা হতো না বলে কখনো জানা হয়নি মানুষটা কেমন। তবে কমেন্ট দেখে মনে হতো, মানুষটা বেশ মজার।
একদিন খুব পিঠা খেতে ইচ্ছে করছে এমন এক স্ট্যাটাস দেবার পর সানি তাকে নিজের মায়ের হাতের পিঠা খাবার আমন্ত্রণ জানান। তানিয়া খুব একটা গুরুত্ব দিলেন না বটে, কিন্তু সানি নিজের ফোন নাম্বার পর্যন্ত দিয়ে রাখলেন ইনবক্সে।
এরপর ২০১১ সালে এমন একটি ঘটনা ঘটে যার প্রভাবে আরেকটু কমে আসে দুজনের দুরত্ব। সে সময়ে কেউ একজন তানিয়ার নাম ও ছবি নিয়ে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে তার ছবিতেই খারাপ কমেন্ট করা শুরু করে। এ ব্যাপারটা তানিয়া খেয়াল না করলেও সানি খেয়াল করেন ঠিকই। তিনি তানিয়ার ইনবক্সে লম্বা মেসেজ দেন এ ব্যাপারে, বলেন যেন একটু খেয়াল রাখে। তানিয়া কোনো রিপ্লাই না দিয়ে শুধু নিজের কিছু পোস্ট ডিলিট করে দেন।
নিজের বাবা-মায়ের ওপরে খুব রাগ ছিল তানিয়ার। সেই রাগ একদিন প্রকাশ পায় একটি স্ট্যাটাসে। সেদিনই ইনবক্সে সানির সাথে তার প্রথম কথা হয়। সানি বলেন, ‘প্লিজ, মা-বাবা যতই খারাপ হোক জন্ম দিয়েছে তো। আপনার মা-বাবার উপর আপনার অনেক রাগ বুঝেছি, একদিন আমার বাসায় আসবেন, আমার আম্মুর সাথে আপনাকে কথা বলাবো, তখন বুঝবেন মা – বাবা খারাপ হতেই পারে না।‘ এর পর কী আর রাগ ধরে রাখা যায়? এভাবে ছোট ছোট কথার শুরু। একদিন হঠাৎ কী মনে করে ইনবক্স থেকে সানির নাম্বার নিয়ে ফোন করেন। সানি কিছুতেই মেলাতে পারেননি এটা তানিয়া, কারণ তার কণ্ঠটা ভারী। অল্প কিছু কথা হয় সেদিন।
এরপর আরো অনেকটা সময় কেটে যায়। সানি যে এদিকে তানিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছেন, তা তানিয়া জানতে পারেন সানির পরিচিত একজনের থেকে। তা জানার পর থেকেই তানিয়া ভাবতে শুরু করেন, আসলেই অনেক কিছু তার খেয়াল এড়িয়ে গেছে। ফোনে একটু একটু করে কথা বলা বাড়ে, সকাল, বিকেল, রাত।
একদিন কী মনে করে তানিয়া জিজ্ঞেস করেন “তুমি কী করো?” যখন জানতে পারলেন চাকরি করেন না, তখন বেশ অবাক হন তানিয়া। ২-৩ মাস পর সানির বাবা মারা গেলেন। সে সময়ে একজন অবলম্বন দরকার ছিল সানির, তানিয়াই ছিলেন সেই মানুষ, সেই অবলম্বন। তখন সানি বারবার বলতেন “তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?” হয়তো এই কথাটা মনে রেখেই কখনো তাকে ছেড়ে জাননি তানিয়া। মাস ছয়েক পর প্রথম দেখা হয় তাদের।
সব সম্পর্কেরই এমন একটা সময় আসে, যখন ভালোবাসাটাকে আরেকটু পাকাপোক্ত করার চিন্তা করেন কেউ একজন। সানি একসময় তানিয়াকে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি বিয়ে করবে না?”
জবাবে তানিয়া বলেন, “আমাকে কে বিয়ে করবে? আমার মা- বাবা নেই, এতিমখানায় বড় হয়েছি, আমাদের মত মেয়েদের বিয়ের কথা চিন্তা করা পাপ।“ সরাসরি কোনো উত্তর দেননি সেদিন।
পুরো সময়টাতেই চাকরি ছিল না সানির। তানিয়া বারবারই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে কাজ করাটা আসলে তেমন খারাপ হবে না। তার বাবা একটা বিজনেস করতেন, সেটাতেও খুব একটা লাভ হতো না জেনে এ ব্যাপারে তেমন একটা চাপাচাপি করেননি তানিয়া। একটা সময়ে সানির জন্য নিজেই উদ্যোগ নিয়ে একটা ট্রেড লাইসেন্স করে দেন। তবে বারবার কাজ করতে জোর করায় রাগারাগি করতেন সানি। তাদের সম্পর্কটা একটু অন্যরকম হয়ে যায় ধীরে ধীরে।
২০১৪ সালের দিকে তানিয়ার ভাইয়ের দেশের বাইরে যাবার ব্যবস্থা হয়, তানিয়া ঠিক করেন ভাই থাকতে থাকতেই সানির সাথে তার সম্পর্কের একটা বন্দোবস্ত হওয়া জরুরী। কিন্তু সানির বাবা মারা গেছেন এক বছর হয়নি, এ সময়ে বিয়ে দিতে পরিবার রাজি হবে না। ফলে ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই ছোট করে এনগেজমেন্ট হয় তাদের, সানির পরিবারকেও জানানো হয়নি এ সময়ে। কিছুদিন পরে তাদের উভয়ের বন্ধুদের উপস্থিতিতে আকদ হয়।
এনগেজমেন্টের পর বছর দুই পার হয়ে যায়, ক্রমশ রেগে উঠতে থাকেন তানিয়া। এর মাঝে সানির ওমানে যাবার ভিসা ঠিক হয়। সানির মা তার দাদুকে জানান, যেহেতু অনেকটা সময়ের জন্য সানি বাইরে চলে যাচ্ছেন তাই বিয়ে দিতে চান। কিন্তু এত দ্রুত মেয়ে পাওয়া যাবে কোথায়? সানির মা জানালেন, মেয়ে ঠিক আছে।
তানিয়ার ভাইকেও দেশে আসতে বলা হয়। যেহেতু আকদ করা আছে, তাই ছোট করে রিসিপশন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময়ে সপ্তাহখানেক চট্টগ্রামে ছিলেন তানিয়া, একদিন সানির গ্রামের বাড়িতেও যান। সবাইকে খুবই মিশুক লাগে তানিয়ার।
এরপর যেন জাদুর মতই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তানিয়া আবিষ্কার করেন, তার শাশুড়ি অসাধারণ একজন মানুষ। আর যে সানির এতদিন কাজ করার প্রতি ছিল তীব্র অনীহা, তিনিও এখন ওমানে ৯টা-৬টা জব করেন। সব বাধা-বিপত্তি আর ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে এখন নতুন এক সূচনা হয়েছে সানি এবং তানিয়ার জীবনে।