‘কারও অবহেলা থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে’
সিআইডির ডিআইজি মাঈনুল হাসান বলেছেন, মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় গাফিলতি থাকায় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তিতাসের ৮ বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো অবহেলা রয়েছে কিনা, ডিপিডিসির কোনো অবহেলা আছে কিনা, স্থানীয় মসজিদ কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা আছে কিনা- এগুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কারও অবহেলা থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিআইডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের তল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত তিতাস গ্যাসের ৪ কর্মকর্তাসহ ৮ জনের ২ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার দুপুরে গ্রেফতারের পর বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে গ্রেফতারকৃতদের হাজির করা হয়।
এ সময় ওই ৮ জনকে অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- তিতাসের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম, উপ ব্যবস্থাপক মাহামুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী আইউব আলী, হেলপার হানিফ মিয়া ও কর্মচারী ইসমাইল প্রধান।
এদিকে তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদের বিস্ফোরণের ঘটনা অনুসন্ধানে তিতাসের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনসহ এলাকাবাসী এবং মসজিদ কমিটি সদস্যরা।
নিহতদের পরিবার, এলাকাবাসী এবং মসজিদ কমিটির দাবি, তিতাস তাদের দায় এড়ানোর জন্য নিরপেক্ষ রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঁচানোর জন্যই তদন্ত প্রতিবেদনে নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিতাস কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য পুরো রিপোর্টে মসজিদ কমিটির উপর দোষ চাপিয়েছেন। তিতাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এমন প্রতিবেদনে আমরা হতাশ।
তিনি বলেন, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তিতাস গ্যাস লিকেজ মেরামত করার জন্য তিতাস গ্যাস অফিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সাধারণ সম্পাদকের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিল এটা মসজিদের মুসল্লিসহ এলাকার শত শত লোক জানেন। অথচ এ ব্যাপারে তারা কৌশলে নিজেদের আত্মরক্ষা করেছে।
এদিকে বিস্ফোরণে নিহত মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল মালেক নেসারীর ছেলে নাইমুল ইসলাম জানান, তিতাস নিহতদের পরিবারের প্রতি যাতে ক্ষতিপূরণ দিতে না হয় এজন্য তারা পায়তারা করছে।
তিনি বলেন পরিকল্পিতভাবে তিতাস দায় এড়ানোর জন্য মসজিদ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক (যিনি এই ঘটনায় মারা গেছেন) হান্নান সাউদ তিতাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরেই এক জুম্মার দিন গ্যাসের লিকেজ মেরামত করতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষের ব্যাপারে মুসল্লিদের অবগত করেছিলেন। তিনি এই টাকা যোগাড় করতে মুসল্লিদের কাছে সাহায্যের আবেদনও করেছিলেন।
এদিকে নিহত অনেকের স্বজনরা বলেন, মসজিদ কমিটির গাফিলতি আর দোষ থাকলে তাহলে মসজিদ কমিটির লোকজন কিভাবে এই বিস্ফোরণে মারা গেলেন? যে সাধারণ সম্পাদকের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছিল তিনিও তো মারা গেছেন।
তারা বলেন, তিতাসের রিপোর্ট একপেশে, নিরপেক্ষ নয়। জেলা প্রশাসনের রিপোর্টেও কাউকে এককভাবে দায়ী না করায় আমরা মর্মাহত।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টায় সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শনিবার বিকাল পর্যন্ত ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আইসিইউতে আশঙ্কাজনক রয়েছেন ৪ জন।