৩৮২টি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সেই চালককে গ্রেফতার

৩৮২টি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে সড়ক দুর্ঘটনায় পর্বতারোহী রেশমা আক্তার রত্না (৩২) নিহতের ঘটনায় জড়িত মাইক্রোবাসসহ চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই চালকের নাম নাঈম (২৭)।

মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার ইব্রাহিমপুর থেকে কালো রঙের মাইক্রোবাসসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।

তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন-অর-রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, কালো মাইক্রোবাসটির সম্ভাব্য যাত্রাপথ ধরে এটির অবস্থান শনাক্তে কাজ শুরু করা হয় প্রথম দিন থেকেই। প্রাথমিকভাবে মূল সড়ক, অন্যান্য সড়ক, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক স্থাপনার প্রবেশ পথে থাকা ৩৮২টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে ঘটনার কিছু সময় পূর্ব ও পরে মাইক্রোবাসটির যাত্রাপথ শনাক্তে সক্ষম হই।

তিনি বলেন, এসব সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে কালো হাইএস মডেলের মাইক্রোবাসটির বেশকিছু অস্পষ্ট ডিজিটাল নম্বর প্লেটের ছবি পাওয়া যায়। প্রাপ্ত নম্বরগুলো কিছুটা স্পষ্টকরণপূর্বক প্রাথমিকভাবে ১১২টি মাইক্রোবাসের বিষয়ে কাজ শুরু হয়। ৪টি আলাদা টিম গঠন করে বিআরটিএসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এ সকল মাইক্রোবাসের মালিকানা, রঙ, সিটের সংখ্যা সংগ্রহ করে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করি।

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর কাফরুল থানাধীন ইব্রাহীমপুর থেকে জব্দ করা হয় কালো রঙের ১২ সিটের হাইএস মাইক্রোবাসটি। গ্রেফতার করা হয় মাইক্রোবাসের চালক মো. নাঈমকে (২৭), যে দুর্ঘটনার সময় মাইক্রোবাসটি চালাচ্ছিল। মাইক্রোবাসটির মালিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে গাড়িটি মাসিকভিত্তিতে ভাড়া দিয়েছেন। ঘটনার দিন প্রতিষ্ঠানের নাইট শিফটে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন গন্তব্যে নামিয়ে দেয়ার সময় ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।

শেরে বাংলানগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীকাল বুধবার আসামিকে আদালতে পাঠানো হবে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট সকালে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে মাইক্রোবাসের চাপায় গুরুতর আহত হন সাইকেলআরোহী রত্না। তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সাইক্লিস্ট সাবিনা ইয়াসমীন মাধবী জানান, রেশমা রত্না পর্বতারোহী, দৌড়বিদ এবং সাইক্লিস্ট ছিলেন। তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতেন।

রেশমার সাইকেলটি পেছন থেকে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। সেটি ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ জব্দ করেছে।

২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের লাদাখে অবস্থিত স্টক কাঙরি পর্বত এবং ৩০ আগস্ট কাং ইয়াতসে-২ পর্বতে সফলভাবে আরোহণ করেন রত্না। দুটি পর্বতই ছয় হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার। এরপর ২০১৮ সালে আফ্রিকার উচ্চতম পর্বত মাউন্ট কিলিমানজারো ও দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত মাউন্ট কেনিয়া অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশের পাহাড় কেওক্রাডংয়ের চূড়া স্পর্শ করার মাধ্যমে শুরু হয় রেশমা রত্নার অভিযান। ওই বছরই মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশিতে অবস্থিত পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিইনিয়ারিংয়ে যান তিনি। কিন্তু অ্যাডভ্যান্স বেজক্যাম্পে যাওয়ার পর তার পায়ে ফ্র্যাকচার হয়। দেশে ফেরার পর সুস্থ হতে লেগে যায় দীর্ঘদিন। পরবর্তী সময়ে নিজ উদ্যোগে সফলভাবে পর্বতারোহণের মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

পর্বতারোহী ও সাইক্লিস্ট উদ্যমী এই তরুণী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরি, আলোর ইশকুলের কর্মসূচি, পাঠচক্রসহ নানা উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন।

এ বিভাগের অন্যান্য