সিনহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হলে ‘গণআদালত’ বসানো হবে: মান্না
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যকাণ্ডের বিচার হবে, বিচার হতে হবে। বিচার যদি তারা (সরকার) না করে তাহলে আমরা বিচার করব। দরকার লাগলে প্রেস ক্লাবের সামনে গণআদালত বসবে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যা ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম।
মান্না বলেন, বিচার সরকার করবে না। কারণ এই পুলিশকে দিয়ে দুই বছর আগে ভোটের নামে আগের রাতে সব ব্যালট কেটেছে। আসলে পুলিশের দোষ কী? পুলিশকে যারা চালায় তারাই নির্দেশ দিয়েছে তোমরা ভোট ডাকাতি কর। পুলিশকে তারাই বলেছে নিজের মতো যা খুশি কর, আমরা সরকার দেখব। যদি তারা দেখত, তাহলে বলেন- ২০৪ জন লোককে একজন থানার ওসি নিজের সিদ্ধান্তে গুলি করে হত্যা করতে পারে?
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, আমাদের লড়াই পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়; আমাদের লড়াই কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। এই লড়াই যারা দুর্বৃত্তায়িত করেছেন, যারা খুন করিয়েছে, যারা জনগণের ওপর অত্যাচার করেছে- সেই সরকারের বিরুদ্ধে। ওরা ১২ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।
তিনি বলেন, দিনে দিনে অনেক দেনা হয়েছে। তাই প্রদীপের গোমর ফাঁস হয়েছে। এরা একদিনে হয়নি। তাদের সঙ্গে আরও ব্যক্তি জড়িত। এ পর্যন্ত যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। এ হত্যার জন্য কারা দায়ী সে সম্পর্কে জনগণকে জানানো হোক। কতগুলো মানুষ এখন পর্যন্ত গুম হয়ে আছে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হোক।
সিনহা হত্যকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কে হত্যা করেছে সিনহাকে? আমি প্রদীপ দাস এবং লিয়াকতকে যতটুকু দোষী মনে করি, তার চাইতে বেশি দোষী এই আওয়ামী লীগ সরকার। তারা তাদের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য বিচারবহির্ভূত হত্যার লাইসেন্স দিয়েছে।
তিনি বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা কোনো রাজনীতিকরণ করতে চাই না। আশা করব প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন এর সুষ্ঠু বিচার হবে। যদি তা না হয় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করব। তার কারণেই সিনহার পরিবার হত্যার বিচার পায়নি। আমরা অপেক্ষা করে রইলাম।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গায় মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। নারীরা সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারছেন না। বাসে, স্কুলে গেলেই তারা নির্যাতিত হচ্ছেন। সেসব প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে একজন আওয়ামী লীগার পাবেন। দেশের পরিস্থিতি এখন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের পরিস্থিতি। সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ক্রসফায়ারে শুধু জীবন যাচ্ছে না, সত্য নিহত হয়ে যাচ্ছে। সত্যকে মেরে ফেলা হচ্ছে। ক্রসফায়ারের এ কালচার বন্ধ করতে হবে। তদন্ত হোক, নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে আমরা চাই- কাউকে বাঁচানোর জন্য নয়, কাউকে ফাঁসানোর জন্য নয়। নিরপেক্ষতার তদন্তের মধ্য দিয়ে একটি উদাহরণ সৃষ্টি হোক বাংলাদেশে যে ন্যায়বিচার হয়েছে। তাতে হয়তো তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর বিএনপির উদ্দেশে বলেন, কাপুরুষতা নিয়ে রাজপথে আসবেন না। রক্ত ঝরবে, মার খাবো, রাজপথ ছাড়ব না। ২০০ জনের উপস্থিতিতে ২০ জন পুলিশ আসবে আর চলে যাব- এটা নয়।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মেজর (অব.) সিনহা হত্যা অনাকাঙ্ক্ষিত বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত হত্যা। যারা অনাকাঙ্ক্ষিত বলছেন তারা এটার পক্ষে সাফাই গাইছেন। আজ সরকার একটা ঘটনা ঘটাবে, এটাকে লুকাতে আবার অন্যটি সাজানো হবে।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সস্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) সারোয়ার হোসেন, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন প্রমুখ।