জালিয়াতিতে বেদখল হচ্ছে কয়েকশ’ কোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি
ফরিদপুরের ঈশান চন্দ্র দাস সরকারের পরিত্যক্ত কয়েকশ’ কোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে বেদখল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফরিদপুর শহরের ১১৮নং মূল মৌজার ঝিলটুলী ও আলিপুর মহল্লার প্রায় ২০ একর জমিসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন মৌজার বিস্তীর্ণ ভূসম্পত্তির মালিক ছিলেন তৎকালীন জমিদার ঈশান চন্দ্র দাস সরকার ও তার ভাই ইন্দু ভূষণ দাস সরকার।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল, ঈশান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদপুর মিউজিয়াম, সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়, জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়, পাট কর্মকর্তার কার্যালয়, সরকারি তিতুমীর বাজার, চকবাজার ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা এই সম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে। যেখানে শহরের সবচেয়ে মূল্যবান ঝিলটুলী মহল্লার বেশিরভাগ জমি রয়েছে।
এ সম্পত্তি সম্প্রতি ঈশান চন্দ্র দাস সরকারের ওয়ারিশ দাবি করে জনৈক ব্যক্তি দখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভূমি অফিস বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ ব্যাপারে দুদকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ঈশান এস্টেটের মালিক ঈশান চন্দ্র দাস সরকারের ছিল তিন পুত্র জ্যোতিশ চন্দ্র সরকার, ধীরেন্দ্রনাথ সরকার ও সুরেশ চন্দ্র সরকার এবং তার ভাই ইন্দু ভূষণ সরকারের ছিল তিন পুত্র সত্যভূষণ সরকার, ভক্তিভূষণ সরকার, শক্তি ভূষণ সরকার ও স্ত্রী নিলীমা সরকার। ৬২ সালের মধ্যে এরা সবাই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান।
২০১২ সালে অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি আইনের পর ঈশান চন্দ্র দাস সরকারের উত্তরাধিকার দাবি করে সম্পত্তি অবমুক্তির আবেদন করেন জনৈক উজ্জ্বল সরকার গং। তারা দাবির স্বপক্ষে ঈশান গোপালপুর ইউপির তৎকালীন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী পংকজ স্বাক্ষরিত একটি ওয়ারিশ সনদ দাখিল করেন। তাতে ঈশান চন্দ্র সরকারের ৬ পুত্র উল্লেখ করা হয়।
যাদের একজন ক্ষিরোদ চন্দ্র সরকার। এই ক্ষিরোদ চন্দ্রের প্রপৌত্রদ্বয় উজ্জ্বল সরকার, উৎপল সরকার ও উত্তম সরকার। নামজারির সময় ওয়ারিশ সনদ নিয়ে সহকারী কমিশনারের (ভূমি)সন্দেহ হলে সেটি পুনরায় যাচাইয়ের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট পাঠানো হয়। এরপরই বিশাল এই ভূসম্পত্তি আত্মসাতের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মজনু বলেন, ঈশান চন্দ্র সরকারের গোমস্তা ক্ষিতীশ চন্দ্রকে সন্তান সাজিয়ে পুরো সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি জানান, আরএস এবং সিএস খতিয়ানের রেকর্ডপত্র, দলিল দস্তাবেজ ও মামলার নথি ঘেঁটে দেখা গেছে সবখানেই ঈশান চন্দ্র সরকারের তিন পুত্র থাকার তথ্য উল্লেখ রয়েছে। ফরিদপুর সদর মুনসেফ আদালতে ১৯৬১ সালের ১৬/৬১নং মামলায় দেখা যায় ডিক্রিদার পক্ষ হিসেবেও রয়েছে এই তিন পুত্রের নামই। এ ছাড়া ১৯৪৪ সালের জেলা রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে ঈশান চন্দ্র সরকারের পুত্রদের নামে তিনটি দলিল সম্পাদন হয় সেখানেও আর কারো নাম নেই।
এ ব্যাপারে নুরুজ্জামান চৌধুরী পংকজ বলেন, ইউপি মেম্বার প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে যেই প্রতিবেদন দিয়েছিলেন সে প্রেক্ষিতে ওয়ারিশ সনদ দেয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে ভূমি অফিসে আমাদের তলব করেছিল তবে যারা ওই সনদ নিয়েছিলেন তারা হাজির হননি।
এ ব্যাপারে উজ্জ্বল সরকার নিজেকে ঈশান সরকারের বৈধ ওয়ারিশ দাবি করে বলেন, একটি পক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ করছেন। যে সব সম্পত্তি দানকৃত সে সবে তাদের কোনো দাবি নেই। বর্তমানে আমরা ছাড়া আর কোনো বৈধ ওয়ারিশও নেই ঈশান চন্দ্র সরকারের। ভূমি অফিসের শুনানিতে অংশ নিতে তিনি সেখানে হাজির হয়েছিলেন বলে জানান।
এ দিকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল ভূসম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা চেষ্টার বিষয়ে দুদকে লিখিত অভিযোগ করেন নিউ মার্কেটের ৯ জন ব্যবসায়ী। তারা অভিযোগ করেন, ঈশান বাবুর পরিত্যক্ত ‘ক’ তফশিলভুক্ত হাজার কোটি টাকার ভূসম্পত্তি দুর্নীতির মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। আর এতে লিপ্ত রয়েছেন উজ্জ্বল সরকার গং। তাদের সহযোগী রয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী পংকজ, তৎকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তহশিল পিওন ওবায়দুর, সার্ভেয়ার মো. হারুন।
ফরিদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ মো. সজীব জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে