সেই শিরিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে পুলিশের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন জেদান আল মূসা

মবরুর আহমদ সাজু:

বাংলাদেশে স্মরণ কালের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে যে জঙ্গি অভিযান হয়  সেট হয়েছিল সিলেটের আতিয়া মহলে। সেখানে দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন সুনামগঞ্জ জেলার দিরাইয়ের ভাটিপাড়া গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে শিরিন মিয়া। ওই ঘটনার সময় শিরিন মিয়ানগরীর শিববাড়ির ড্রাইভার রেস্টুরেন্টে বাবুর্চি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। হামলার সময় স্প্লিন্টারের আঘাতে পঙ্গুত্ব বরণ করে প্রথম দফায় প্রায় চার মাস ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ।  হাসপাতালের বেডে অভাব অনুটনে দীর্ঘ যন্ত্রনার পর যখন কেউ এগিয়ে আসেনি তখন শিরিন মিয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন সিলেট  মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা। শিরিন মিয়া বর্তমানে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যান জেদান আল মুসা।  তখন হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসাধীন শিরিনের চিকিৎসা ব্যয়ের পাশাপাশি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা জেদান আল মুসা  বলেন,পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার সঙ্গে দেশের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থেকে জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে  গুরুত্ব দেওয়ার জন্য পুলিশরা কাজ করে।পুলিশ মানুষের বন্ধু।জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের বন্ধু হিসেবে পুলিশ  আছে পুলিশ থাকবে।

তিনি  বলেন, ‘ সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে শিরিন মিয়ার চিকিৎসায় সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আমি তাকে এই সহযোগিতা করবো। তিনি সুস্থ হওয়ার পর তাকে একটি দোকান খুলে দেয়ারও চেষ্টা করবো।’আমি মনে করি গরীব দু:খি মানুষের সেবা করা ্ প্রত্যেক মানুষের উচিত

আহত শিরিন মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন পর পর স্প্লিন্টারের আঘাতে ক্ষতস্থানে ব্যাথা শুরু হয়। তখন আবার হাসপাতালে আসতে হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন অস্ত্রপ্রচার করা লাগবে। কিন্তু টাকা পয়সা না থাকায় অপারেশন করাতে পারছিলাম না। এখন পুলিশ কর্মকর্তা জেদান আল মুসা পাশে দাঁড়ানোয় সাহস পাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ নগরীর দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ীস্থ আতিয়া মহলে অপারেশন টোয়াইলাইট চলাকালে বোমা বিস্ফোরণে স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন সুনামগঞ্জ জেলার দিরাইয়ের ভাটিপাড়া গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে শিরিন মিয়া। ওই ঘটনার সময় তিনি নগরীর শিববাড়ির ড্রাইভার রেস্টুরেন্টে বাবুর্চি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্প্লিন্টারের আঘাতে পঙ্গুত্ব বরণ করে প্রথম দফায় প্রায় চার মাস ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

পরে চলাফেরা ও কাজ করতে না পারায় চাকরিও চলে যায় তার। অভাবের কারণে সন্তানকে নিয়ে তার স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যান। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় দফায় ফের হাসপাতালে ভর্তি হন শিরিন মিয়া। এখনও তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রসঙ্গত কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার গোয়াল গ্রামের জেদান আল মুসা সিলেটে সে ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিলেটে তাঁর দায়িত্বগ্রহণের পর আধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তরিকতা দিয়ে অপরাধীদের দমন করার চেষ্টা করে চলেছেন ।পাশাপাশি মেধা, পরিশ্রম ও নিজের সততার মাধ্যমে পুলিশ বিভাগের ইমেজকেই দীপ্তমান করছেন প্রতিনিয়ত । যার প্রমান শিরিন মিয়া। সম্প্রতি বিশ্বের মানচিত্রে দক্ষিণ সুদান ২০১১ সালে স্বধীনতা লাভ করেছে সেখানে ও তিনি  শান্তি রক্ষার জন্য অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর সাথে বাংলাদেশের যে কয়েকজন পুলিশ অফিসার বিদেশের মাঠিতে গিয়েছিলেন এবং সে সময় স্বদেশকে বহি:বিশ্বে প্রেজেন্টেশন করেছেনিএ পুলিশ অফিসার।  জানাযায়, ২০১১ সালে ও ২০১৭ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দারফুর ও জুবাতে, দীর্ঘদিন অত্যন্ত দক্ষতার সহিত কাজ করেছেন
২০১৩ সালের ১৮ এপ্রিল এসএমপিতে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। শুরুতে তিনি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অর্থ ও হিসাব) শাখায় দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি মহানগর গোয়েন্দা শাখারঅতিরিক্ত উপকমিশনার এবং দীর্ঘ ৪ বছর ৬ মাস যাবৎ।

তিনি অতিরিক্ত উপকমিশনার দক্ষিণের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে এসএমপির মিডিয়া কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। এর আগেও তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দারফুরে ১ বছর ৪ মাস কর্মরত ছিলেন। এবার তিনি সাউথ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে এসেছেন

এছাড়া তিনি সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ, সিলেট ডিআইজি অফিসের স্টাফ অফিসার, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী জেলা এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া, জেদান আল মুসা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজিতে বিএসসি (অনার্স) ও এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার গোয়াল গ্রামের বাসিন্দা জেদান ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী ফারিহা বিনতে হক একজন গৃহিণী। জেদান আল মুসা ও ফারিহার লাবীবা ও জাহিত নামের এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য