পবিত্র শবে মেরাজের সংক্ষিপ্ত পরিচিত- আহসান হাবীব শাহ

 

হযরত উলামায়ে কিরামগণদের পরিভাষায় মসজিদে হারাম অর্থাৎ পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ থেকে মসজিদে আকসা অর্থাৎ বাইতুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণকে ইসরা বলা হয়। আর মসজিদে আকসা থেকে ছিদরাতুল মুনতাহা অতঃপর সেখান থেকে মহান আল্লাহ পাকের মুবারক সাক্ষাৎ পর্যন্ত ভ্রমণকে পবিত্র মি’রাজ শরীফ বলা হয়। কখনো কখনো উভয় ভ্রমণকে একত্রে ‘ইসরা’ ও ‘মি’রাজ’ বলা হয়। উল্লেখ্য, ‘ইসরা’ শাব্দিক অর্থ হলো রাতের বেলা ভ্রমণ করা। আর মি’রাজ শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো সিঁড়ি বা সোপান।

অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ২৭শে রজবুল হারাম সোমবার রাতের বেলা বোরাকে চড়ে পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ থেকে পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস এর মাঝে গিয়ে পৌঁছান। সেখানে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইমাম হয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করেন। নামায শেষে পবিত্র বাইতুল মুক্বাদ্দাস থেকে বের হওয়ার পর উনার জন্য পবিত্র বেহেশত থেকে পবিত্র যমরদ ও পবিত্র যবরযদ পাথরের একটি সিঁড়ি আনয়ন করা হয়। তিনি পুনরায় বোরাকে সওয়ার হয়ে উক্ত সিঁড়ি উপর দিয়ে ভ্রমণ ও পরিদর্শন করে করে সপ্তাকাশ গিয়ে পৌঁছেন। সেখানে পবিত্র বাইতুল মা’মূর যা ফেরেশতাদের পবিত্র ক্বিবলা, জান্নাত, জাহান্নাম, শরীফুল আক্বলাম অর্থাৎ তাক্বদীর ও বিধি-বিধান লিপিবদ্ধ করার দফতর, ছিদরাতুল মুনতাহা ইত্যাদি নিদর্শনসমূহ পরিদর্শন করেন।

অতঃপর সেখান থেকে সবুজ রঙের ‘রফরফ’ নামক মখমলী আসনে উপবেশন করে বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত নূরের পর্দাসমূহ অতিক্রম করে অবশেষে মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালার পবিত্র দরবার শরীফের মাঝে পৌঁছেন ও উনার পরম মুবারক দীদারে মিলিত হন।
সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র কোরআন শরিফ থেকে শবে মেরাজের দলীল-

আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-
১) পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।
(সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ১)

১) নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়।

২) তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।

৩) এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।

৪) কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।

৫) তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা,

৬) সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল।

৭) উর্ধ্ব দিগন্তে,

৯) অতঃপর নিকটবর্তী হল ও ঝুলে গেল।

১০) তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।

১১) তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন।

১২) রসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে।

১৩) তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে?

১৪) নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল,

১৫) সিদরাতুলমুন্তাহার নিকটে,

১৬) যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত।

১৭) যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল।

১৮) তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি।

১৯) নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান
নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।

(সুরা আন-নাজম, আয়াত ১-১৯ )

হাদীস শরিফ থেকে শবে মেরাজের দলীল-

শবে মেরাজ রজনীতে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বচক্ষুদ্বয় মোবারকে মহান আল্লাহ পাকের দীদার লাভ করেছেনঃ

শবে মেরাজে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর (রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর) নিকটবর্তী হলেন। অতিনিকটবর্তীর ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম। তখন আল্লাহ তাঁর প্রতি ওহী পাঠালেন।
(দলীল- বুখারীঃ ৭৫১৭, ই ফাঃ ৭০০৯, মুসলিমঃ ১৬২, আহমদঃ ১২৫০)

রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়সাসল্লাম এরশাদ মুবারক করেন-
“আমি আমার প্রভূকে অতি সুন্দর আকৃতিতে দেখেছি, অতঃপর তিনি আমার দুকাঁধের মধ্যখানে তাঁর কুদরতী হস্ত মুবারক রাখলেন , এতে আমি আমার বুকে শীতলতা অনুভব করলাম এবং আসমান যমীনের মধ্যে যতকিছু রয়েছে সবকিছু জেনে নিলাম ।”
(দলীল- মিশকাত শরীফ, ৬৮ পৃষ্ঠা)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাকের সাথে আমার প্রতিটি মুহূর্ত বা সময় এমনভাবে অতিবাহিত হয় যেখানে কোনো নবী-রসূল এবং কোনো নৈকট্যশীল ফেরেশতা পৌঁছাতে সক্ষম নন।”
(দলীল- জামিউছ ছগীর। সিররুল আসরার।)

পবিত্র শবে মিরাজের সত্যতা এবং ঘটনা সম্পর্কে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করেন। কিন্তু পবিত্র কোরআন-হাদিসে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
এমন সত্য ঘটনাকে উপলব্ধি বা হৃদয়ঙ্গম করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কর্তব্য।

  • হজরত আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথম শবে মিরাজের বাস্তব ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আর এ জন্য তিনি পেয়েছিলেন ‘সিদ্দিকে আকবর’ খেতাব অর্থাৎ মহাসত্যবাদী। কাজেই আমরা হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মিরাজ সংঘটিত ঘটনাকে আমাদেরও উচিত ‘সিদ্দিকে আকবরের’ ন্যায় শবে মিরাজের ঘটনাবলি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস স্থাপন করে নিজেদের সাদেকিনদের (সত্যবাদীদের) অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া।
    লেখক-ফ্রান্স প্রবাসী
এ বিভাগের অন্যান্য