একজন ভালো রাজনৈতিক নেতা টেকসই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত: হারুন লোদী

কেস স্টাডি এক:

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে আজ আমরা একটি নতুন প্রজন্মের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। এই আগামীর পথচলায় আবার নতুন করে তরুণদের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও অন্যান্য পেশাদারিত্বে আমাদের তরুণদের অর্জন ঈর্ষণীয় হলেও শুধু একটি ক্ষেত্রে চরম অনীহা ও ব্যর্থতা লক্ষণীয়। আর তা হলো ‘রাজনীতি’। একথা সত্য যে, ছাত্ররাজনীতি আজও এদেশে বিদ্যমান। তবে যে কাঙ্ক্ষিত সুস্থ এবং প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা সবাই প্রত্যাশা করে তার সঙ্গে বর্তমান ছাত্ররাজনীতির যোজন যোজন দূরত্ব।

চলমান রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের হতাশার অন্ত নেই। প্রথমত আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় আদর্শ এখন আর নির্দিষ্ট করা যায় না। ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’ আর ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ ধরনের বাক্য ব্যবহার করে সত্য-মিথ্যা, অতিশয়োক্তি সবকিছু চতুর রাজনীতিকরা জায়েজ করে নেন
জনীতি বিশ্বের মহৎতম পেশা। যদিও অনেকেই এ বিষয়ে তর্কে লিপ্ত হবেন। একজন রাজনৈতিক নেতা তার নির্বাচনী এলাকা ও তার দেশের মানুষের সেবায় তার জীবনকে নিয়োজিত ও উৎসর্গ করেন। তিনি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে কাজ করেন। কিন্তু এই পেশাকে মহৎ রাখতে হলে ভালো রাজনৈতিক নেতার কোনো বিকল্প নেই।
রাজনীতির সঙ্গে ‘নীতি’ কথাটা যুক্ত আছে। নীতি হলো কিছু আদর্শ নিয়ম-কানুন। অতীতে আমরা দেখেছি যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, তারা নীতি-নৈতিকতার চর্চা করেছেন। রাজনীতিবিদদের মানুষ শ্রদ্ধা করত। তাদের কথায় জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা বোধ করত না। রাজনীতি ছিল এক সময় দেশ ও মানুষের সেবা করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা। যারা রাজনীতির খাতায় নাম লেখাতেন তারা আত্মস্বার্থ কখনো বিবেচনায় রাখতেন না। দেশ-জাতি, মানুষের কল্যাণই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা জাতির কল্যাণ সাধনায় ব্রতী হয়ে নিজেদের দিকে তাকানোর সময় পেতেন না। জনগণের স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে চলতেন সব ধরনের ভয়-ভীতি, লোভ-লালসাকে উপেক্ষা করে। আর এখন? দেশ-জাতি এসব শব্দ আজকের রাজনৈতিক নেতাদের ক’জনের মস্তিষ্কে বাসা বাঁধতে পেরেছে তা গবেষণার বিষয় হতে পারে। উপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত-সবখানে একই ধারা চলছে বছরের পর বছর ধরে। দলগুলো ব্যস্ত রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখতে, কিংবা দখল করতে। আর নিচু পর্যায়ে ‘নেতারা’ ব্যস্ত হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তার সবটা উদরস্থ করে ফুলে-ফেঁপে পাটখড়ি থেকে হাতি হতে। আর যারা রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে, তারা অপেক্ষায় থাকে কবে সে সোনার হরিণ ধরা দেবে, যা তাদের ভাগ্য খুলে দেবে। এ জন্য তাদের ছল-বল-কৌশল প্রয়োগের কোনো শেষ নেই।

কেস স্টাডি দুই:

রাজনীতির সঙ্গে নেতা ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। নেতা ছাড়া রাজনীতি কল্পনাই করা যায় নায়। যাদের হাত ধরে নীতি প্রণয়ন হয়, প্রতিষ্ঠিত হয়, নীতির প্রচার-ও প্রসার হয়, তাদের মধ্যেই আজ নীতি-নৈতিকতা নির্বাসিত-প্রায়। আজকে রাজনীতির মাঠে নীতিহীন নেতার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
এখন আসা যাক মূল কথায়
জনগণ আর নেতার মধ্যে মিল আছে, সূত্র আছে, যোগাযোগ আছে। তবে দুজনের মধ্যে পার্থক্যও আছে। নেতা জনগণকে দেখে তার দুই চোখে, কিন্তু নেতাকে জনগণ দেখে অসংখ্য চোখে। দুই চোখ দিয়ে নেতা কোটি চোখকে প্রত্যক্ষ করেন, নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই নেতার দুচোখ জনগণের অসংখ্য চোখের চেয়ে প্রখর হতে হয়। এরূপ প্রখরতা যার কাছে আমরা উপলব্ধি করি তিনি হলেন জননেতা সরওয়ার হোসেন।জননেতা সরওয়ার হোসেনের “গ্রেফতার নির্যাতন কারাবাস” এবং অজানা কথা।সরওয়ার হোসেন ১৯৫৮ সালে সিলেটে জন্মগ্রহন করেন।উনার শৈশব কাল কেটেছে হযরত শাহজালালের(রঃ) এর পুন্যভুমি সিলেটে।তিনি ১৯৭৬ সালে সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৭৮ সালে সরকারী তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৮২ সালে একই কলেজ থেকে বিকম পাশ করেন।ছাত্র জীবনেই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের হাত ধরে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ঐ সময় তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন।পরবর্তিতে তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রসংসদের এজিএস নির্বাচিত হন।তারই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৮৩ সালে তৎকালিন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হন।তৎকালিন সময় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে যেয়ে তিনি স্বৈরশাসকের অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখে পড়েন।পরবর্তিতে ঐ সময়ের স্বৈরশাসকের অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখে জেল,ঝুলুম,হুলিয়া মাথায় নিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।তারপর তিনি প্রথমে যুক্তরাজ্যে ও পরবর্তীতে কানাডায় আশ্রয় নেন এবং কানাডায় স্হায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।কিন্তু রক্তে যার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তিনি তো থেমে যাবার পাত্র নন।তাই তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে কানাডায় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কার্যক্রম শুরু করেন।আর তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে কানাডা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।উল্লেখ্য যে তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশের স্বৈরশাসকদের দ্বারা বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন ও কারাভোগ করেন।জননেতা সরওয়ার হোসেন একদিনে গড়ে উঠেননি বিন্দু বিন্দু ত্যাগ এর বিনিময়ে আজ বিয়ানীবাজার গোলাপগঞ্জ বাসীর প্রানের জননেতা সরওয়ার হোসেন

কেস স্টাডি তিন:

নির্বাচনে বিপুল ভাবে জিতলেই এক জন নেতা বা নেত্রী মনে করেন যে, তিনি যোগ্য, সফল এবং শক্তিশালী নেতা। কিন্তু সেটা এক মস্ত বড় ভুল। জয়লাভ করা মানেই কিন্তু ভালো নেতা হওয়া নয়। হিটলারও তার জাতীয়তাবাদী সমাজতন্ত্রী দলের পক্ষে পেয়েছিলেন এক বিপুল জনসমর্থন। জনপ্রিয় হওয়া আর যোগ্য হওয়া তাই এক কথা নয় মোটেই।

আগামীর উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি তা হবে অরণ্যে রোদন। আর সে জন্যই দরকার শিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া। একথা সত্যি যে, এ দেশের বর্তমান রাজনীতি কর্দমাক্ত, কেউই এই কাদা গায়ে মাখাতে চাইবে না। তবে এ কথা ভুলে গেলেও চলবে না আপনার ঘরের ময়লা আপনাকেই পরিষ্কার করতে নামতে হবে, পাড়া-প্রতিবেশী এসে করে দেবে না আর দিতে চাইলেও তা আপনার সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হবে। জঞ্জাল পরিষ্কারে নিজের গায়েও কিছু ময়লা লাগবে ঠিকই কিন্তু কোমরে গামছা বেঁধে শক্ত চোয়ালে পণ করে মাঠে নামলে এ ময়লা একদিন পরিষ্কার হবেই।
ইতিহাস সাক্ষী দেয় তরুণদের প্রচেষ্টা কখনো বৃথা যায়নি আর কখনো যাবেও না। মেধাবী ছেলেমেয়েদের তাই রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে এবং অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে অনুপ্রেরণা জোগাতে হবে।

লেখক :কলামিস্ট ও সমাজকর্মী

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য