বাংলাদেশের পুলিশ শান্তি নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক: জেদান আল মুসা

 

এসএমপি অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) :
মবরুর আহমদ সাজু:
পুলিশ নিয়ে অনেকের বিরুপ ধারণা থাকলেও কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার গোয়াল গ্রামের জেদান আল মুসা সিলেটে সে ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিলেটে তাঁর দায়িত্বগ্রহণের পর আধুনিকতা, প্রযুক্তি ও সততা দিয়ে অপরাধ দমন করার চেষ্টা কওে চলেছেন। মেধাবী, পরিশ্রমী ও নিজের সততার মাধ্যমে পুলিশ বিভাগের ইমেজকেই দীপ্তমান করে চলেছেন প্রতিনিয়ত । সম্প্রতি বিশ্বের মানচিত্রে দক্ষিণ সুদান ২০১১ সালে স্বধীনতা লাভ করে। সেখানে শান্তি রক্ষার জন্য অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর সাথে বাংলাদেশের যে কয়েকজন পুলিশ অফিসার বিদেশের মাঠিতে গিয়েছিলেন এবং সে সময় স্বদেশকে বহি:বিশ্বে প্রেজেন্টেশন করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম জেদান আল মুসা। তিনি সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) ও এসএমপির মিডিয়া কর্মকর্তা। জেদান আল মুসা ২০১১ সালে ও ২০১৭ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দারফুর ও জুবাতে, দীর্ঘদিন অত্যন্ত দক্ষতার সহিত কাজ করেছেন
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) ও এসএমপির মিডিয়া কর্মকর্তা মো. জেদান আল মুসা। ২০১৩ সালের ১৮ এপ্রিল এসএমপিতে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। শুরুতে তিনি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অর্থ ও হিসাব) শাখায় দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি মহানগর গোয়েন্দা শাখারঅতিরিক্ত উপকমিশনার এবং দীর্ঘ ৪ বছর ৬ মাস যাবৎ

তিনি অতিরিক্ত উপকমিশনার দক্ষিণের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে এসএমপির মিডিয়া কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। এর আগেও তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দারফুরে ১ বছর ৪ মাস কর্মরত ছিলেন। এবার তিনি সাউথ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে এসেছেন

এছাড়া তিনি সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ, সিলেট ডিআইজি অফিসের স্টাফ অফিসার, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী জেলা এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া, জেদান আল মুসা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজিতে বিএসসি (অনার্স) ও এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার গোয়াল গ্রামের বাসিন্দা জেদান ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী ফারিহা বিনতে হক একজন গৃহিণী। জেদান আল মুসা ও ফারিহার লাবীবা ও জাহিত নামের এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। সম্প্রতি পুলিশের ভেতর-বাহির নিয়ে, কথা বলেছেন তিনি । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিলেটের সময়ের  প্রতিবেদক মবরুর আহমদ সাজু
সিলেটের সময় :কেমন আছেন

জেদান আল মুসা: আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
সিলেটের সময়: ২০১১ সালে স্বাধীন হওয়া দেশ দক্ষিণ সুদান,একবার নয় দুবার শান্তি রক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন?
জেদান আল মুসা: পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নিয়েছে নতুন একটি দেশ। নাম দক্ষিণ সুদান। সেইসঙ্গে অবসান হয়েছে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের। মূলত ২০০৫ সালে সম্পাদিত শান্তি চুক্তিই রাষ্ট্র হিসাবে দক্ষিণ সুদানের আবির্ভাবকে সম্ভব করে তোলে। সব সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশের মতো ভুগতে হচ্ছে দক্ষিণ সুদানকে। দেশটিতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতি হলেও শান্তি আসেনি পুরোপুরি।
সিলেটের সময় : মানবাধিকার রক্ষায় দেশ পেরিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের পুলিশ 
জেদান আল মুসা: বাংলাদেশ পুলিশ দেশের শান্তি নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রদান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতাযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনী তার ডাকে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেখান থেকে আমরা উজ্জ্বিবিত। বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশে শান্তিস্থাপন এবং মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশ পুলিশের ‘ব্লুহেলমেট’ পরিহিত সদস্যদের অনবদ্য অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। তাদের দক্ষতা, নৈতিকতা ও উঁচুমানের পেশাদারিত্ব বিশ্ববাসীর অকুন্ঠ সমর্থন ও প্রশংসা অর্জন করেছে। এতে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকতে হবে।
সিলেটের সময় :: সিলেটে বর্তমানে আইন-শৃঙখলার অবস্থা কেমন ?
জেদান আল মুসা: সিলেটে বর্তমানে আইন-শৃঙখলার অবস্থা ভালো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।অপরাধীদের কে কোনোরকম ছাড় নয়।
সিলেটের সময় : আপনি পুলিশ উপকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন ?
জেদান আল মুসা: আমি পুলিশ উপকমিশনার হিসেবে যোগদান করারপর সিলেটের এলাকায় দালাল মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করেছি। মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, অপহরণ, ভুমিদস্যু ও বিভিন্ন রকম অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমার ও আমার আইন শৃঙখলা বাহিনীর পদক্ষেপ সর্বদা অব্যহত রাখবো এবং অপরাধীদের সাথে আমার কোন আপোষ নেই।
সিলেটের সময় : রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুলিশ সদস্যরা কি ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায় ?
জেদান আল মুসা : পুলিশে কর্মস্পৃহার ঘাটতির কোনো সুযোগ নেই। যত প্রতিকূলতা, যত ঝুঁকি থাক না কেন, এর মধ্যেই পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করে যাবে। দায়িত্ব থেকে পিছপা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকে, নির্দেশনাও থাকে। আর পুলিশ তো সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যদি এগিয়ে আসে, পুলিশকে সহায়তা করে, তখন পুলিশের কাজ আরও সহজতর হবে। আমি তাই অনুরোধ করব, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত মহান দায়িত্ব দৃঢ় মনোবল, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে। সাধারণ মানুষ যাতে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে।
সিলেটের সময় : পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে, এসব সমাধানে কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
জেদান আলমুসা : আমার মূল পরিকল্পনা পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া। জনগণ ও পুলিশের মধ্যে যে দূরত্ব আছে তা দূর করে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করা; যাতে পুলিশ জনমুখী ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। এজন্য কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ও সুসংহত করতে হবে, যাতে এর মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দেওয়া যায়। পাশাপাশি জনগণ যাতে বিভিন্ন ইভেন্টে পুলিশের সঙ্গে মিশতে পারে। এতে জনগণ পুলিশের ভালো-মন্দ এবং সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারবে। পুলিশ-জনগণের মধ্যে বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরি হলেই আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
সিলেটের সময় :: সিলেটে পুলশিকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের এ অভিযোগ কতটুকু সত্য?
জেদান আল মুসা : রাজনীতিবিদরা যে রাজনৈতিক কাজ করেন সেখানে পুলিশের কাজ করার কি সুযোগ আছে? রাজনীতিবিদদের কাজের সঙ্গে পুলিশের কাজের তফাত আছে। পুলিশ কাজ করে আইন মেনে। আপনারা কি দেখেছেন কোনো রাজনৈতিক সভায় গিয়ে পুলিশ বক্তৃতা দিয়েছে? পুলিশ কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হয়েছে? পুলিশ রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে।

সিলেটের সময় : আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশে নারী সদস্যদের ভূমিকা কতটুকু..
জেদান আল মুসা: : পুলিশের প্রতিটি সেক্টরে নারী পুলিশ যথেষ্ট ভালো কাজ করছে। তদন্ত, নিরাপত্তা, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, বিভিন্ন জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো তারা দেখাশোনা করে। এভাবেই নারী পুলিশ সব কর্মকান্ড জড়িত। বিদেশেও নারী পুলিশ ভালো কাজ করছে। ইউএন মিশনগুলোয় তারা ভালো ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘের মহাসচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। হাইতি ও কঙ্গোতে নারী পুলিশ কাজ করছে। নারী পুলিশের সংখ্যা আমরা বাড়াচ্ছি।

সিলেটের সময় : সিলেটের মানুষের কাছে পুলিশের প্রত্যাশা কী?
জেদান আল মুসা : জনগণকে আমরা সব সময় বলি, পুলিশের সঙ্গে আপনারা সম্পৃক্ত হোন। পুলিশকে ওন করুন। পুলিশ যে জনগণের তা বুঝতে হবে। পুলিশের যদি দোষত্রুটি বা ব্যর্থতা থাকে তা ধরিয়ে দিন। পরামর্শ দিন। পুলিশের সঙ্গে যত সম্পৃক্ততা বাড়বে ততই জনগণের সহায়তা পাওয়া যাবে। আমার অনুরোধ থাকবে, পুলিশকে আপন ভাবতে হবে। পুলিশকে কাছে টেনে নিতে হবে। পুলিশকে গাইড করতে হবে। পুলিশকে নিজের লোক মনে করতে হবে। একইভাবে পুলিশকেও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে। উভয়ের মধ্যে যদি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তাহলে সেখানে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং পুলিশ ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করার পথ সুগম হবে।

সিলেটের সময় : ভালো পুলিশ আর মন্দ পুলিশ দুই-ই আছে। ভালো পুলিশ হওয়ার জন্য কোনটি বেশি প্রয়োজনীয়?
জেদান আল মুসা: ভালো পুলিশ হওয়ার জন্য অবশ্যই ভাল কাজ করতে হবে। নৈতিকভাবে সৎ মানুষ হতে হবে। বঙ্গবন্ধু একটা কথা বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে, সোনার মানুষ চাই। ভাল পুলিশ ও ভাল মানুষ হওয়ার মধ্যে কোন বিরোধ নেই। জীবনে ভাল মানুষ হওয়াটা বেশি জরুরি। ভাল পুলিশ ও ভাল মানুষ জীবনে দুটোই হতে চেয়েছি। একজন ভাল মানুষ সে পুলিশেই থাকুক অথবা অন্য যে কোন পেশায় থাকুক, সে সব জায়গাই ভাল।
সিলেটের সময় :: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
জেদান আল মুসা: আপনাকে ও সিলেটের সময় কে ধন্যবাদ

শান্তি রক্ষা মিশনে জেদান আল মুসার কিছু ছবি:

এ বিভাগের অন্যান্য