সিলেটে মহাজোট নিয়ে সক্রিয় আ.লীগ,দোটানায় ঐক্যফ্রন্ট

  মবরুর আহমদ সাজু. এম.এ.ওয়াহিদ চৌধুরী 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক প্রস্তুতি সভা করে মহাজোটের ব্যানারে মাঠে নেমেছে সিলেটে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি এখনো প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সরব হতে মহানগর বিএনপি আগামী শনিবার বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছে। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনকে সামনে রেখে এ সভার মধ্য দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা নির্ধারণ চূড়ান্ত হবে বলে সংগঠন সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ মাঠে আর বিএনপি প্রস্তুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার এ অবস্থাকে সিলেটে নির্বাচনী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ায় সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে থাকা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। অপরদিকে এক আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় এবং প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় দোদুল্যমান অবস্থায় আছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে একটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর মহাজোটের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয় গত ২৮ নভেম্বর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে। গত এক সপ্তাহে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল সর্বশেষ মহাজোটের সমন্বয় সভা হয়েছে। সর্বশেষ সভায় মহাজোটের সমন্বয়ক মনোনীত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটে সক্রিয় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি এখনও আছে চূড়ান্ত প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা জানার অপেক্ষায়।সিলেটে ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট অন্তত চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তবে সিলেট-৫ ও সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যেমন আছেন, তেমনি মহাজোটের শরিক দলের প্রার্থীও আছেন। ফলে এ দুটি আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী কে হবেন, তা এখনও ঠিক হয়নি। বাকি চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ায় আওয়ামী লীগ সক্রিয় হয়ে ওঠেছে।বিশেষ করে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের পক্ষে সক্রিয় দলের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যেই ড. মোমেনের সমর্থনে একাধিক প্রস্তুতি সভা, ঘরোয়া বৈঠক, আলোচনা সভা, উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা প্রভৃতি হয়েছে।আওয়ামী লীগ নিজেরা যেমন সক্রিয় হচ্ছে, তেমনি মহাজোটের শরিক দলগুলোকেও সক্রিয় করার চেষ্টা করছে। সিলেটে মহাজোটের সমন্বয় সভাও হয়েছে। এখানে মহাজোটের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।আগামী ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনি প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।সামগ্রিক বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখি দল। দলের নেতাকর্মীরা সবসময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকেন। এবারও নেতাকর্মীরা ব্যাপক সক্রিয় রয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।’আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি সক্রিয় হতে কিছুটা বিলম্ব করছে। সিলেটের দুটি আসনে শুক্রবার বিএনপির প্রার্থী ঠিক হলেও গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-১ আসনসহ বাকি আসনগুলোতে প্রার্থী নির্ধারিত না হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা আছেন অপেক্ষায়।বিএনপি নেতারা বলছেন, দু-একদিনের মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তখন নির্ধারিত প্রার্থীর পক্ষে শুরু হবে নেতাকর্মীরা তোড়জোড় শুরু করবেন। এছাড়া পুলিশি হয়রানি, গ্রেফতার প্রভৃতিকেও পিছিয়ে পড়ার কারণ বলে অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ শনিবার বিশেষ বর্ধিত সভা আহবান করেছেন মহানগর বিএনপি। নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ সভায় নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত্ চৌধুরী সাদেক বলেন, ‘নানামুখি হয়রানির মধ্যেও আমাদের নেতাকর্মীরা সক্রিয় রয়েছেন। দল কিংবা জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত হলে নেতাকর্মীরা সর্বাত্মকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠবেন।’

সিলেট বিএনপির বিভাজন নতুন কিছু নয়। সাইফুর রহমান আর ইলিয়াস আলী অনুসারীদের দ্বন্দ্বের কারণে অনেক ভুগতে হয়েছে দলটিকে। সাইফুর রহমান প্রয়াত হয়েছেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ, দলেরও এখন চরম দুর্দিন। তবু বিভেদ ঘুচেনি দলটির নেতাকর্মীদের।

বরং সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন সিলেটের বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলের মনোনয়ন পাওয়া দুই প্রার্থী ইনাম আহমদ চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের পক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন সিলেট বিএনপির নেতারা। এতোদিন এই বিভক্তি আড়ালে থাকলেও শুক্রবার তা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক সচিব ইনাম আহমদ চৌধুরীকে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে শুক্রবার বিএনপির মহাসচিবের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ দলটির ৫১ নেতা। যাদের সকলেই সাইফুর অনুসারী বলে পরিচিত।

আবার সিলেট বিএনপিতে ইলিয়াস আলী অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতারা অবস্থান নিয়েছেন খন্দকার মুক্তাদিরের পক্ষে। তারা মুক্তাদিরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ফলে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিলেট বিএনপিতে ফের দেখা দিয়েছে সাইফুর-ইলিয়াস বলয়ের পুরনো বিভক্তি। নেতাদের এমন বিভক্তি নির্বাচনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন কর্মীরা।

এ বিভাগের অন্যান্য