আওয়ামী লীগ চিন্তিত নয়

বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ। এমনকি এ নিয়ে দলের ভেতরে কোনো ধরনের অস্বস্তিও নেই। তবে পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। বিকল্পধারাকেও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে সরকারি দল।

গত শনিবার বিএনপির পাশাপাশি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। এই ঐক্যফ্রণ্টে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারার থাকার কথা থাকলেও শেষতক সেটা হয়নি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ নিয়ে সরকারবিরোধী রাজনীতিতে এক ধরনের ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হলেও আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই সরকারি দলে। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে তারা চিন্তিত নন। তবে বিকল্পধারাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব মেনে নেওয়ায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি গতকাল রোববার মাদারীপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় বলেছেন, ‘আমি কামাল হোসেন সাহেবকে বাহবা জানাই। তিনি কার সঙ্গে ঐক্য করেছেন? তিনি বড় বড় কথা বলেন দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে। বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি তাদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন। আর নেতা মানছেন কাকে? যারা খুনি, মানুষ পুড়িয়ে মারে, দুর্নীতিবাজ, এতিমের টাকা মেরে খায়, তাদের সঙ্গে ঐক্য করেছে কে?’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী সমকালকে বলেছেন, তথাকথিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো আগ্রহ নেই। এই ঐক্যফ্রন্ট রাজনীতিতে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে পারবে না। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আরও বলেছেন, গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন শাস্তিপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ঐক্য করেছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি তারেক রহমানকে নেতা মেনেই এমন ঐক্য করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জনবিচ্ছিন্ন। তারা অতীতে জনপ্রিয় হলেও এখন রাজনৈতিকভাবে এতিম। পথহারা পাখি। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। সুতরাং তাদের এই ঐক্যও টিকবে না। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এ ধরনের ঐক্য করেছে বিএনপি। তাদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরও রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে কিংবা নির্বাচনী জোটে বিকল্পধারা আসছে কি না- এ রকম প্রশ্নের উত্তরে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে না থাকার কথা বলেছে বিকল্পধারা। আর জামায়াতবিরোধী সবার সঙ্গে আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু নির্বাচনী মিত্র হবে কি-না, সেটা এখনই বলা মুশকিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একজন দুর্নীতিবাজ। তার ছেলে তারেক রহমান একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ছাড়াও অর্থ পাচারের মামলায় সাজা পেয়েছেন। এই দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন ড. কামাল হোসেন। তার জন্য দুঃখ লাগে। আসলে ব্যক্তিস্বার্থেই দুর্নীতিবাজ, হত্যা-ক্যু এবং জঙ্গিবাদীদের মধ্যে ঐক্য তৈরি হয়েছে। এ কারণেই এই ঐক্য কোনো ধরনের সাড়া ফেলবে না। লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের প্রত্যাশা, বিকল্পধারা তাদের কথামতো জামায়াতের সঙ্গে কোনো ঐক্যে যাবে না। আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐক্য হতে পারে।

বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী সাবেক এমপি। এর মধ্যে ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও মাহী বি. চৌধুরী মুন্সীগঞ্জের দুটি আসন এবং মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ঢাকার একটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন। বর্তমানে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর বিকল্পধারা নিয়ে বিকল্প ভাবনা রয়েছে সরকারি দলে। এ ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে তাদের কয়েকজন প্রার্থীকে ছাড় দেওয়ার গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।

এ বিভাগের অন্যান্য