স্মৃতির খাতায়

ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার

জেলা শহরের কলেজে পড়ার সময় ক্লাসের একটি অনিন্দ্য সুন্দর মেয়ে প্রাণবন্ত এবং উচ্ছ্বসিত মায়াবী হাসির জন্য ভীষণভাবে সবার নজর কাড়ে। সহজ-সরল সাবলীল কথাবার্তা এবং স্বভাবসুলভ হৈচৈয়ের জন্য কলেজে ক্রমেই সে সবার কাছে প্রভাতের সদ্য ফোটা ফুলের মতো প্রিয় হয়ে ওঠে। তার চলাফেরা, ভাব-ভঙ্গি এবং চাহনি ছিল আকর্ষণীয়। অনেক আশার আলো ছড়িয়ে ঠোঁটের কোণে একটু হাসি এনে মিষ্টি স্বরে কথা বলার সময় তৃপ্তির আভা চারদিকে ছড়িয়ে যেত। মেয়েটির মন মাতানো ভুবন ভোলানো হাসি আর মোহনীয় কথার মাধ্যমে সবাইকে আপন করে নিত

খুব সহজেই। তার হৃদয়জুড়ে ছিল এক অকল্পনীয় সরলতা। সে গল্পগুজবে কলেজের সবাইকে সারাক্ষণ মুখর করে রাখত।

ভীষণভাবে মুগ্ধ হয়ে মনের অজান্তেই তার মাঝে আমি তীব্র ভালোলাগা খুঁজে পাই। ক্রমেই তাকে আমার ভালো লাগা শুরু করে। মনের স্বপ্ন ঘুড়িটা আকাশে উড়িয়ে মেঘের ভেলায় ভেসে ঘন মেঘের চাদরে হারিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মেয়েটিকে বলব-বলব করে বলা হয় না। আলাপচারিতায় মেয়েটিও কিছু বলতে চায় অথচ বলে না। চিন্তা-চেতনায় অসার ঘটিয়ে স্বতঃস্ম্ফূর্ত আবেগ আর উচ্ছ্বাস এবং একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে একদিন তাকে মনের না বলা কথা জানাতে গিয়ে শুনি, মেয়েটি হঠাৎ ক্লাস ছুটির আগেই কেন জানি কলেজ ছেড়ে চলে গেছে।

সপ্তাহ খানেক কলেজে না আসায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মেয়েটি বাবার বদলি সূত্রে দু’দিন আগে অন্যত্র চলে গেছে। শুনে বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ড হতাশা আর বিষণ্ণতা এসে ভর করে। মনে হয় কী যেন হারালাম। বুকের ভেতরটা মোচড়ে বেদনায় নহর বয়ে যায়। হঠাৎ সব স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে নিজেকে ভীষণ অসহায় বোধ করি। থেমে যায় আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। অগোচরে চোখের পানি ফেলে ব্যর্থ হৃদয় নিয়ে আমি এখন শুধু তার অপেক্ষায়। মেয়েটি আমার স্মৃতির কোঠায় স্থায়ী ছাপ এনে চির অম্লান হয়ে আছে। কারণ সে আমার প্রথম ভালো লাগার স্বপ্নসারথি। যদিও কখনও তাকে দেখার সুযোগ হয়নি।

মেয়েটির স্মৃতি সবসময় তীব্র অনুভূতি নিয়ে হৃদয়ে শুধু বেদনা জাগায়। তার সুন্দর মুখখানি স্মৃতিপটে বারবার ভেসে আসে। কিন্তু বেলা শেষে ঘরে ফেরা পাখির মতো আমি গন্তব্যহীন দাঁড়িয়ে মুখে এক টুকরো হাসি নিয়ে। চলার পথের ফেলে আসা দিনগুলো উঁকি মারে। হৃদয় দোলে আশা-নিরাশায়। ক্ষণিকের জন্য হলেও দেখা হবে কি কোনোদিন? তাকে যে ভুলতে পারিনি।

এ বিভাগের অন্যান্য