সিলেটে যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী বৃষ্টিতে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ

॥ নামে-বেনামে চলছে অন্তত ৫০-৬০ হাজার রিকশা।
॥অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রণ করে ৮-৯টি সিন্ডিকেট ॥

মবরুর আহমদ সাজু :
যানজট আর জলাবদ্ধতা এই দুই সমস্যায় সিলেটের নাগরিক জীবন এখন অতিষ্ঠ। আর বৃষ্টিতে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ সবমিলিয়ে সিলেট এখন যেন যানজটের নগর। সকাল, দুপুর কিংবা রাস্তাঘাটে যে কোনো সময়ই লেগে আছে যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকা পড়ে নগরবাসী নাকাল হচ্ছে প্রতিদিন। অন্যদিকে একটু বৃষ্টি হলেই ডুবে যাচ্ছে নগরের বেশির ভাগ এলাকা। বিভিন্ন সড়ক এমনকি বিপণিবিতানেও তখন পানি থইথই করে। এই দুই সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও নগরবাসী এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। উল্টো দিন দিন সংকট আরো প্রকট হচ্ছে। সিলেট ১৯৮৪ সালে তৎকালীন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নগরে ১০ হাজার ২০৪টি রিকশা চলাচলের অনুমতি দেয়। এর মধ্যে শুধু সিটি করপোরেশনের অধীন রিকশার সংখ্যা চার হাজারের মতো। বাকি রিকশা বিভিন্ন ইউনিয়নের আওতাভুক্ত। তবে এগুলো নগরে চলাচল করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে নামে-বেনামে চলছে অন্তত ৫০-৬০ হাজার রিকশা। এই অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রণ করে ৮-৯টি সিন্ডিকেট। এসব অবৈধ রিকশা আটকে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালালেও রহস্যজনক কারণে দু-এক দিন পর তা থেমে যায়।সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরের চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, বন্দর বাজার, কোর্ট পয়েন্ট, সুরমা মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাতসহ সড়কের প্রায় অর্ধেক অংশ দখলে নিয়েছে হকাররা। এমনকি সিটি করপোরেশনের নবনির্মিত ভবনের প্রবেশদ্বারের দুই পাশও হকারদের দখলে। এ ছাড়া সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেয়ালে ‘হকার বসা নিষেধ’, ‘পথচারী চলাচলের জন্য উন্মুক্ত’ লেখা সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও এই সাইনবোর্ডের সামনেই ফুটপাত দখল করে নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। অনেক স্থানে সাইনবোর্ড তুলে ফেলা হয়েছে কিংবা ভেঙে ফেলাও হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনন্ত আটটি কারণে নগরবাসীকে দীর্ঘদিন ধরে যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মধ্যে হাজার হাজার অবৈধ রিকশার চলাচল, সড়ক ও ফুটপাত অবৈধভাবে দখল ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া অন্যতম। অন্যদিকে জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা । নগরবাসীর দীর্ঘদিনের এক দুর্ভোগের নাম যানজট। সাম্প্রতিককালে যানজট ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। নগরের যেসব সড়কে কোনো দিন যানজট দেখা য়ায়নি এখন সেসব সড়কেও দীর্ঘক্ষণ যানজট থাকে। নগরের রিকাবীবাজার-চৌহাট্টা সড়ক অন্যান্য সড়কের চেয়ে অনেক বড় হলেও এখন এ সড়কেও প্রতিদিন দীর্ঘ সারি থাকে যানবাহনের। কখনো এ সারি স্টেডিয়াম মার্কেট পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায়, যা অতীতে কোনো দিন হয়নি। এই সড়কের দুই পাশেই গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড রাস্তার একটি অংশ দখল করে আছে। এ ছাড়া উল্টো পথে রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করায় আরো একটি অংশ ব্যবহার করা যায় না। ট্রাফিক পুলিশকেও এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায় না। এ ছাড়া সুবিদবাজার, আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, তালতলা, বন্দর বাজার, মেডিক্যাল রোড, পূর্ব জিন্দাবাজার, জেল রোড, সোবহানীঘাট, শিবগঞ্জ, নতুন পুলের মুখ সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। সিলেট নগরে যানজটের পেছনে অনেক কারণ বিভিন্ন সময় চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অপ্রশস্ত সড়ক, অবৈধ রিকশার আধিক্য, সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি, নগরজুড়ে গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড, অপরিকল্পিতভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা, ফুটপাত ও সড়ক দখল, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি এবং বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এ ছাড়া দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে যানজট লেগে থাকে। প্রায়ই দেখা যায়, সড়কের বাঁ দিকের লাইনও ট্রাফিক পুলিশ আটকে রাখে। ফলে যানজট দীর্ঘ হতে থাকে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমদ মাসুম বলেন, ‘নগরে যানজট দিন দিন বাড়ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে নষ্ট হচ্ছে। এখন পথ চলাই কষ্টকর। হেঁটে যাব, সেই সুযোগও নেই। ফুটপাত হকারদের দখলে। এমনকি সড়কেও হকার।’ তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদারকি ও আন্তরিকতার অভাবেই অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি এবং উচ্ছেদ করছি। কিন্তু পরে আবার দখল হয়ে যায়।’ হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে নগরের সিটি মার্কেট ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরকে হকারমুক্ত করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া যানজট নিরসনে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিভাগের অন্যান্য