স্বাধীনতা এক গোলাপ ফোটানো দিন, তাওসিফ মোনাওয়ার

স্বাধীনতা এক গোলাপ ফোটানো দিন, স্বাধীনতা এক সূর্য জাগানো দিন। আসছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে এই প্রজন্মের প্রতিনিধিদের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম তাদের কাছে স্বাধীনতার সংজ্ঞা কী? তাদের ভাবনাগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন সৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার

‘স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি নিজের বিবেক আর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ’

—সাদিয়া ইসলাম

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীনতা মানে স্ব অধীনতা, অর্থাত্ নিজের অধীনে চলা। স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি নিজের বিবেক আর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। আমার কিছু বলতে ইচ্ছা করছে, বলে দিলাম। লিখতে ইচ্ছা করছে, লিখে ফেললাম। কিছু করতে ইচ্ছা হয়েছে তো করলাম। বিবেকের কথা উল্লেখ করলাম কারণ সব ইচ্ছাই কিন্তু শোভন বা দেশ ও দশের পক্ষে উপকারী নাও হতে পারে, তাই স্বাধীনতা মানে অবাধ লাগামহীন আচরণ না, বরং মার্জিত ও রুচিশীল ব্যবহার।

বাস্তব অর্থে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি ৪৭ বছর হয়ে গেল। কিন্তু আসলেও কি স্বাধীন হতে পেরেছি? নাহলে জাফর ইকবাল স্যারের মতো বুদ্ধিজীবীদের চলাফেরার স্বাধীনতা কেন এখনো দিতে পারি না আমরা? বাল্যবিবাহের শিকার স্কুলপড়ুয়া মেয়েগুলো শিক্ষার স্বাধীনতা কেন পায় না? ১৮ বছর বয়সী একজন প্রাপ্তবয়স্ক যুবক বা যুবতী কেন ভবিষ্যত্ ক্যারিয়ার বা উচ্চশিক্ষার বিষয় নির্ধারণের স্বাধীনতা রাখে না? মতপ্রকাশেও কত বাধা। চিন্তাধারার মিল না হলে প্রাণ দিতে হয়। বারবার এমন একেকটা দুর্ঘটনা মেনে নিতে নিতে আমরা শিখেছি এটাই ‘স্বাভাবিক’। আবার আপনার কথা কারো বিপক্ষে গেলে সে অনায়াসেই ৫৭ ধারায় মামলা করে দিতে পারে। তবে মতপ্রকাশের স্বীকৃত অধিকার আর কতটুকুই বা বাস্তবায়িত হলো?

সোশাল মিডিয়াগুলো এসে মতপ্রকাশকে আরও সহজতর করে তুললেও এর অবাধ ব্যবহারের কুফলও আমরা পাচ্ছি হাতেনাতেই। যেকোনো ইস্যুতেই দুইভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া এখনকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যেকোনো প্রসঙ্গে ধর্মকে টেনে আনা হয়। দম বন্ধ হয়ে আসে যখন দেখি বীরত্বের জন্য ‘ডটার অব বাংলাদেশ’ স্বীকৃতি পাওয়া নিহত বৈমানিক পৃথুলা রশিদকে শুধু মেয়ে হওয়ার জন্য কত নোংরা কথা শুনতে হয়। রুচিহীন বিকার থেকে রক্ষা পায় না সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের মতো দেশসেরা তারকারাও। আমরা ভুলে যাই, গুণীদের কদর না করলে গুণীরা জন্মাবে না।

এসব কথার উদ্দেশ্য একটাই, স্বাধীনতা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি স্বাধীনতার মান রক্ষা করা। কাজেই চলুন প্রতিজ্ঞা করি যে, আমাদের স্বাধীনতা যেন অন্যের উপকার ছাড়া ক্ষতির কারণ না হয়।

০০০

‘স্বাধীনতা নামের পাখিটি নিঃশঙ্ক চিত্তে ডানা মেলুক সম্ভাবনার আকাশে’

—নূর হোসেন নয়ন

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীনতা আমার কাছে আকাশে উড়তে থাকা পাখির মতো। উড়তে দেখলে ভালো লাগে, খাচায় বন্দি রাখলে ঠিক মানায় না। এই অস্থির সময়ে মনে হচ্ছে সেই পাখিটাকে আটকে ফেলার একটা চেষ্টা করা হচ্ছে। যুক্তির মাধ্যমে মুক্তির সুড়ঙ্গের শেষ কিনারায় পৌঁছুতে চাওয়া মানুষগুলোকে অস্ত্রের আঘাতে চুপ করানোর একটা প্রথা সবার চোখের সামনেই তিলে তিলে গড়ে উঠছে। ব্লগার হত্যা কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো মানুষদের ওপর হামলা সেই প্রথারই সন্তান। সবচেয়ে দুঃখের কথা হলো একটা বিরাট সংখ্যক মানুষ না পড়ে, না জেনে, না বুঝেই অন্যদের ঘৃণা করতে শিখছে; কথা বলার অধিকারটুকু কেড়ে নিতে চাচ্ছে এবং বিপরীত মতের মানুষদের মেরে ফেলতে চাচ্ছে। জীবনের কী নিদারুণ অপচয়!

আমি এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে প্রথম স্বাধীনতাটা থাকবে চিন্তার স্বাধীনতা। স্বপ্নের সেই বাংলাদেশে যে কেউ যা কিছু ইচ্ছা চিন্তা করতে পারবে; সেটা বলতে পারবে এবং সেই কথাগুলো বলার কারণে কেউ তাকে আঘাত করবে না। শত মতের শত মুনি সেই বাংলাদেশে অবাধ বিচরণ করবে, শত পথের শত পথিক সেই বাংলাদেশকে নতুন দিকে নিয়ে যাবে। সবসময় ভালো কিছুই হবে এই শর্ত না থাকলেও সেখানে সবসময় ভালো কিছু সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাটা বেঁচে থাকবে।

তরুণেরাই জাতির চালিকাশক্তি। সেই তরুণদের নিজের মতটুকু প্রকাশের সুযোগ না দিলে অনেক তরুণ তার মনের ভিতরেই বন্দি হবে। এক বিন্দু তারুণ্যের বন্দিদশাও এই দেশকে মহাকালের স্রোতে একটু করে পিছিয়ে দেবে। এই দেশ আর পেছাতে পারে না, যেকোনো মূল্যেই হোক তাকে সামনে এগোতেই হবে। ক্রিকেটে যেমন পুরো দেশ এক পতাকার নিচে জড়ো হই, চিন্তার স্বাধীনতার প্রশ্নেও পুরো জাতির এক হওয়ার সময় এসেছে।

জয় হোক প্রজন্মের, জয় হোক চিন্তার, জয় হোক তারুণ্যের। স্বাধীনতা নামের পাখিটি নিঃশঙ্ক চিত্তে ডানা মেলুক সম্ভাবনার আকাশে।

০০০

‘স্বেচ্ছাচারিতা নয়, স্বাধীনতা মানে সত্য ও সুস্থ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ’

—সব্যসাচী নিলয়

শিক্ষার্থী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

অর্জিত স্বাধীনতা খুব মূল্যবান জিনিস। ১৯৭১ থেকে ২০১৮, এই সময়ে পেরিয়ে গেছে ৪৮ বছর আর স্বাধীনতার চর্চা সময়ের সমানুপাতে কমেছে। বরং ৪৮ বছর বয়সী স্বাধীনতা তার মেকি রূপে ধরা দিচ্ছে তরুণ সমাজের কাছে। আজকের তরুণ সমাজের কাছে স্বাধীনতা মানে সে যা ইচ্ছা তাই করবে, ভালো-মন্দ চিন্তা করার সময় কই! স্বাধীনতা শব্দটিকে কাজে লাগিয়ে অনেকে যে অপরাধ জগতে হামাগুঁড়ি দিচ্ছেন তাও হয়তো জানেন না।

অনেকেই জানেন না, স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। স্বাধীনতা মানে, ‘কারোর অধীনস্থ না হওয়া’ হলেও অন্যের ক্ষতি হতে পারে এমন কাজ করাকে স্বাধীনতা বলে না। বাধাহীনভাবে সুস্থ চিন্তা, শুভ বিবেক, ভালো কাজ করে যাওয়াই স্বাধীনতা।

অথচ যারা এই বিকৃত সমাজের মুখোমুখি হয়েছেন, তারাই স্বাধীনতার মানে ভালো জানেন, উপলব্ধি করেন। সত্য ও সুন্দর চিন্তাগুলো আমাদের দেশে নিন্দিতই হয় বেশি। নানা রকম হয়রানির স্বীকার হওয়ার পর যে ব্যক্তি তার মতামত অথবা অভিযোগ জানিয়েছেন এর পর তাকে আরও বেশি হয়রানির স্বীকার হতে হয়েছে, এমনকি হুমকিও শুনতে হয়েছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতপ্রকাশের এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে সাম্প্র্রতিক সময়ের ঘটনাবলি নিয়ে জনমত যেমন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সেই সঙ্গে তার জনসচেতনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘটছে বিপরীত ঘটনাও। তরুণ সমাজের দেশকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। আমাদের সকলকে মুক্তিযুদ্ধের আর্দশ বুকে ধারণ করতে হবে, দেশের সম্মান ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। মতপ্রকাশে ও হিতকর কাজে বাধাদানকারীকে যেমন আইনের আওতায় আনতে হবে, তেমনি স্বাধীনতার নামে যারা কুকর্ম করে বেড়াচ্ছে তাদেরকেও তদারকির মধ্যে রাখা প্রয়োজন। সর্বোপরি দেশের ভালো হয়, দশের ভালো হয় এমন কাজে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং সরকারকে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

০০০

‘স্বাধীনতার পরিপূর্ণতা অর্জনের পথে আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো নিরূপণ করতে হবে’

—আশফাক জাহান তানজিম

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীনতা এমন একটি শর্ত; যা একটি দেশ বা রাষ্ট্রের পাশাপাশি তার জনগণের সার্বভৌমত্বকেও নিশ্চিত করে। জীবনকে উপভোগ করার জন্য মানুষের থাকে অগণিত বিষয়। সবকিছুই সে তার নিজের মতো করে করতে চায়। সেক্ষেত্রে কেউই বাইরের কারো হস্তক্ষেপ আশা করে না। সবাই নিজস্ব বিষয়াদি নিয়ে নিজের মতো করে থাকতে চায়। স্বাধীনতার বিষয়টি অনেকটা আপন-পর ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতি, ব্যক্তিগত, পারিবারিক যাবতীয় কর্মকাণ্ডের কোনো কিছুতেই সে অন্য কারো ধার ধারতে চায় না। অন্য কারো ওপর নির্ভরশীল হতে চায় নয়। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল অনুপ্রেরণায় ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, দারিদ্র্য ও শ্রেণিবৈষম্যমুক্ত শিক্ষিত সমাজ গঠনের এক দৃঢ় প্রত্যয়। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও নিপীড়নে নিষ্পেষিত এই জাতি মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের মাধ্যমে এক রক্তক্ষয়ী পথ পাড়ি দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেয়। তারপর থেকে আমাদের নিরন্তর পথ চলা শুরু হয়। শুরু হয় স্বাধীনতা পরবর্তী অসমাপ্ত অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা। স্বাধীনতার পরিপূর্ণতা অর্জনের পথে আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো নিরূপণ করতে হবে। নাহলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আর দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনবিহীন স্বাধীনতা আমাদের কল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্মের একজন হিসেবে আমাদের স্বাধীনতার পরিপূর্ণ সুফল গ্রহণ করতে হবে। আমরা যারা তরুণ, তাদেরকে মতপ্রকাশের ও অধিকার আদায়ের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো মানসিকতা তৈরি করে সমাজে যত ধরনের অসঙ্গতি আছে, সেগুলা সমাধানের জন্য অগ্রসর হতে হবে। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে, আমরা স্বাধীনতার পূর্ণ ব্যবহার করছি এবং স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি।

০০০

‘প্রকৃত স্বাধীনতা তখন উপভোগ করা যাবে সবাই যখন ঐক্যবদ্ধ হবে’

—মো. আশফাক উর রহমান

শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

মানুষ হিসেবে সহজাতভাবেই আমরা ভাবনা, চিন্তা ও বিবেকের অধিকারী। নিজেদের ভালোলাগা, খারাপলাগা অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া আমাদের প্রবৃত্তি। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন ব্লগের কল্যাণে যেটা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপযুক্ত প্রয়োগ সম্ভব এই মিডিয়া দ্বারা। সমসাময়িক ঘটনা আমরা নিজেরা যে যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি সেটাই প্রকাশ করতে পারি এই প্লাটফর্মে। তবে কেউ কেউ বিভিন্ন পোস্টে যে ভাষা ব্যবহার করে মন্তব্য করেন আর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করতে থাকেন, তাতে মনে হয় যে সোশ্যাল মিডিয়া যেন স্রেফ গালাগালি করার বা বিদ্বেষ ছড়ানোরই মাধ্যম। অন্যদিকে রাজনৈতিক মতাদর্শের অমিলের কারণে অনেকের হতে হয় নানা হুমকির শিকার। আবার এক শ্রেণির লোকেরা যেন মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতে প্রস্তুত সবসময়। এই শ্রেণির লোকেদের কারণে আবার অনেক মেয়ের চলাফেরার অধিকারটাও বাধাগ্রস্ত হয়। এসব বাধার কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা দায় হয়ে যায়। গত কয়েকদিন থেকে আমাদের ক্যাম্পাসে একের পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেই চলেছে। জাফর ইকবাল স্যারের উপর হামলার পর আর কিছু বলার থাকে না। মতের অমিল হতেই পারে, কিন্তু এই কারণে হত্যার চেষ্টা! যেই বিবেক আমাদেরকে পশু থেকে আলাদা করে, সেটাই যদি বিকৃত হয়ে যায় তাহলে আমাদের সঙ্গে পশুর পার্থক্য কোথায়?

আমাদের মধ্যে নানা বিশৃঙ্খলা। নেই একতা। হারিয়ে যাচ্ছে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা কিংবা সহমর্মিতা।

তাহলে প্রশ্নটা থেকেই যায়, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও আমরা কি আসলেই স্বাধীন?

এই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে এখনই খুঁজে নিতে হবে। যদি উত্তরটা হয়, ‘আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা পাইনি’, তবে সেই স্বাধীনতাকে খুঁজে পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মূল ভূমিকা রাখতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। ঐক্যবদ্ধ হলেই উপভোগ করা যাবে প্রকৃত স্বাধীনতাকে।

০০০

‘স্বাধীনতা সম্পর্কে দেশ ও জাতির আত্মোপলব্ধি প্রয়োজন’

—ইসরাত জাহান ইমা

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পরাধীনতার শেকল ভেঙে স্বাধীন সূর্য পানে আমাদের পদযাত্রা শুরু হয় আজ থেকে ৪৭ বছর আগেই। তবে স্বাধীনতা অর্জনের ৪৭ বছরে পেরিয়েও কি আমরা বলতে পারি, ‘আমরা প্রকৃত স্বাধীন?’

ছোটবেলায় পড়েছিলাম, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দীর কাছাকাছি এসেও পূর্ণ স্বাধীনতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ! ৪৭ বছর খুব স্বল্প সময় নয়। এ বয়সের একজন পরিপূর্ণ মানুষ তার নিজের কৃতকর্মের আত্মসমালোচনা এবং আত্মোপলব্ধি করতে পারেন। তেমনিভাবে একটি দেশ ও জাতির আত্মোপলব্ধি প্রয়োজন। কিন্তু এই আত্মোপলব্ধি ও আত্মসমালোচনার জায়গাটুকুতে আমাদের সমাজ কতটুকু নিশ্চিন্ত! সেটি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের স্বাধীনতার মূলনীতি হলো গণতন্ত্র। যেখানে রাষ্ট্র তার সকল নাগরিকের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করবে। গণতন্ত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা বাস্তবায়িত হওয়ার কোনো অবকাশ আজ আমাদের মাঝে নেই। এদিকে গণতন্ত্র আজ সমাজের গুটিকয়েক ক্ষমতাবান, বিত্তশালী মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সাধারণ জনগণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা শব্দটি আজ লুপ্তপ্রায়। স্বাধীন দেশের স্বাধীন জনগণ আজও পরাধীনতার বেড়াজালে আবদ্ধ। সর্বাঙ্গে অভাব আর পরাধীনতা আমাদের নিম্নবিত্ত শ্রেণিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এখানে বাক স্বাধীনতার পূর্ণ অধিকার নেই, সত্য কথা বলা, মুক্তচিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা আজ বাধাগ্রস্ত। স্বাধীনতা মানে স্বাধীন চেতনায় বাস করা। সেখানে মানুষের বাক স্বাধীনতার অধিকারে বারবার খড়্গ নেমে আসে বলেই প্রশ্ন, আমরা কতটা স্বাধীনতা বজায় রাখতে পেরেছি। সাম্প্রদায়িকতা থেকে শুরু করে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অনাচার, নারী নির্যাতন পর্যন্ত প্রায় সকল ক্ষেত্রেই আমরা পরাধীনতার বেড়াজালে জড়িয়ে আছি।

সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে লেখালেখির মাধ্যমে মানুষ বিশ্বব্যাপী নিজস্ব চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা রাখে। নানাভাবে সেই পথও রুদ্ধ হচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে এই প্রার্থনা, আমরা যেন এসব বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসি।

এ বিভাগের অন্যান্য